Thursday, October 25, 2012

শেষের কবিতা --রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শেষের কবিতা
--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও?
তারি রথ নিত্য উধাও।
জাগিছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন

চক্রে পিষ্ট আধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন।
ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল
তুলে নিল দ্রুতরথে
দু'সাহসী ভ্রমনের পথে

বিদ্রোহী - কাজী নজরুল ইসলাম

      www.fb.com/jrliton77    
              বিদ্রোহী
     কাজী নজরুল ইসলাম 


বল বীর -
বল উন্নত মম শির!

বিদ্রোহের গান --------------------- – সুকান্ত ভট্টাচার্য

বিদ্রোহের গান
--------------------- – সুকান্ত ভট্টাচার্য


বেজে উঠল কি সময়ের ঘড়ি?
এসো তবে আজ বিদ্রোহ করি,

আমরা সবাই যে যার প্রহরী
উঠুক ডাক।

উঠুক তুফান মাটিতে পাহাড়ে
জ্বলুক আগুন গরিবের হাড়ে
কোটি করাঘাত পৌঁছোক দ্বারে
ভীরুরা থাক।

কুরবানী ...........কাজী নজরুল ইসলাম

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !
দুর্বল! ভীরু ! চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষ

ুব্ধ মন !
ধ্বনি উঠে রণি' দূর বাণীর, -
আজিকার এ খুন কোরবানীর !
দুম্বা-শির রুম্-বাসীর
শহীদের শির সেরা আজি !- রহমান কি রুদ্র নন ?
ব্যাস ! চুপ খামোশ রোদন !
আজ শোর ওঠে জোর "খুন দে, জান দে , শির দে বৎস" শোন !
ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !
খন্জর মারো গদ্র্দানেই,
পন্জরে আজি দরদ নেই,
মর্দানী'ই পর্দা নেই,
ডরতা নেই আজ খুন্-খারাবীতে রক্ত-লুব্ধ-মন !
খুনে খেলবো খুন-মাতন !
দুনো উনমাদনাতে সত্য মুক্তি আনতে যুঝবো রণ ।
ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !
চ'ড়েছে খুন আজ খুনিয়ারার
মুসলিমে সারা দুনিয়াটার !
'জুলফেকার' খুলবে তার
দু'ধারী ধার শেরে-খোদার , রক্তে-পূত-বদন !
খুনে আজকে রুধবো মন
ওরে শক্তি-হস্তে মুক্তি, শক্তি রক্তে সুপ্ত শোন্ ।
ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !
এ তো নহে লহু তরবারের
ঘাতক জালিম জোরবারের
কোরবানের জোরজানের
খুন এ যে, এতে গোদ্র্দ ঢের রে, এ ত্যাগে 'বুদ্ধ' মন !
এতে মা রাখে পুত্র পণ !
তাই জননী হাজেরা বেটারে পরা'লো বলির পূত বসন !
ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !
এই দিনই 'মিনা'-ময়দানে
পুত্র-স্নেহের গর্দানে
ছুড়ি হেনে 'খুন ক্ষরিয়ে নে'
রেখেছে আব্বা ইবরাহীম সে আপনা রুদ্র পণ !
ছি ছি ! কেঁপোনা ক্ষুদ্র মন !
আজ জল্লাদ নয় , প্রহ্লাদ-সম মোল্লা খুন-বদন !
ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !
দ্যাখ্ কেঁপেছে 'আরশ' আসমানে
মন-খুনী কি রে রাশ মানে ?
ত্রাস প্রাণে ? তবে রাস্তা নে !
প্রলয় বিষাণ 'কিয়ামতে' তবে বাজবে কোন্ বোধন ?
সে কি সৃষ্টি-সংশোধন ?
ওরে তাথিয়া তাথিয়া নাচে ভৈরব বাজে ডম্বরু শোন্ !-
ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !
মুসলিম-রণ-ডঙ্কা সে,
খুন দেখে করে শঙ্কা কে ?
টঙ্কারে অসি ঝঙ্কারে,
ওরে হুঙ্কারে , ভাঙি গড়া ভীম কারা, ল'ড়বো রণ-মরণ !
ঢালে বাজবে ঝন্-ঝনন্ !
ওরে সত্য মুক্তি স্বাধীনতা দেবে এই সে খুন-মোচন !
ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !
জোর চাই, আর যাচনা নয়,
কোরবানী-দিন আজ না ওই ?
কাজ না আজিকে জান্ মাল দিয়ে মুক্তির উদ্র্ধরণ ?
বল্ - "যুঝবো জান ভি পণ !"
ঐ খুনের খুঁটিতে কল্যাণ-কেতু, লক্ষ্য ঐ তোরণ,
আজ আল্লার নামে জান্ কোরবানে ঈদের পূত বোধন ।
ওরে হত্যা নয় আজ 'সত্যাগ্রহ' শক্তির উদবোধন !

আবার আসিব ফিরে ............. জীবনানন্দ দাশ

আবার আসিব ফিরে
............. জীবনানন্দ দাশ

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে - এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় - হয়তো বা শাঁখচিল শালিকের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিঁকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস হবো - কিশোরীর - ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে

জলঙ্গীর ঢেউ এ ভেজা বাংলারি সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।

প্রতিদান জসীমউদ্দীন

প্রতিদান
জসীমউদ্দীন

আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।

যে মোরে করিল পথের বিবাগী;
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি;

দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর;

আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর।

নেশা .........মোফাজ্জল করিম

নেশা
.........মোফাজ্জল করিম

বাপজান আশা করি কুশলেই আছেন,
পরসমাচার এই যে,
সেদিন আপনি যে কান্ডটা করিলেন
তার জন্য এই পত্রটি না লিখিয়া পারিতেছিনা
দেখিতেছি যতই বয়স বাড়িতেছে, ততই আপনার কান্ড
একেবারেই লোপ পাইতেছে!

আপনি কি করিয়া সেদিন আমার ড্রইংরুমে,
অর্থাৎ বৈঠকখানায় বেমোক্কা ঢুকিয়া পড়িলেন,
বুঝিলাম না
সারাগায়ে ঘামের গন্ধ, ময়লা তেল চিপচিপে পান্ঞ্জাবী,
বগলে ছেঁড়া ছাতা, মাথায় চিতিপড়া কিস্তি টুপি,
যেনো আকবর বাদশার উর্নিশ আর কি!
হাতে মাটির হাড়ি, সর্বোপরি দু'পায়ের চামড়ার
কুচ কুচে কালো রং, বোধহয় লজ্জায় ঢাকিয়া ফেলিবার
আশায়, রাস্তার সবটুকু ধুলি মাখাইয়া
পা দু'টিকে মনে হইতেছিল চুনকাম করাইয়াছেন।
কি লজ্জা, আপনার ঐমূর্তি দেখিয়া আমার বন্ধুগন
এবং তাদের সুন্দরী স্ত্রীরা, বজ্রাহতের মতো তাকাইয়া রহিলো।
যেনো তাহারা চাক্ষুস ভুত দেখিতেছে
আর আমার অবস্হাটা একবার ভাবিয়া দেখুন,
মান, সম্মান, মর্যাদা সব জাহান্নামে গেল,
তাও-না হয়, আপনি যদি দয়া করিয়া একটু চুপ থাকিতেন
তবু একটা কথা ছিল!
তা-না আপনার আবার আহল্লাদে মুখ দিয়া
কথার ফোয়ারা ছুটিতে লাগিলোঃ
"বাবা কেমন আছো? বৌমা কোথায়?"
বলিহারে ভাগ্যিস সেই মুহুর্তে ও সেখানে ছিল না!
থাকিলে সে বেচারির হার্ট এটাক হইয়া যাইতো,
সে তো আবার হঠাৎ কোনো খারাপ দৃশ্য
মোটেই সহ্য করিতে পারেনা,
বড় কোমল হৃদয়ের মানুষ কিনা!
বাপজান তোমাকে সাবধান করিয়া দিতেছি
আর যাই করো, এইভাবে আমাকে ডুবাইয়ো না
টাকা-পয়সা লাগিলে চিঠি দিও পারিলে পাঠাইবো,
আর অতো টাকা পয়সাও যে কেন লাগে তোমাদের তাও বুঝিনা
তোমাদের আবার অতো খরচ কিসের
ক্লাবে যাওনা, পার্টি দাওনা
ইসুবগুল, আর চিরতার পানি ছাড়া
আরতো কোনো নেশাও করো না।

এইটুকু পড়িয়া দরিদ্র স্কুল মাস্টার
পিতা আনমনে বলিয়া উঠিলেনঃ
না, না ভুল বললিরে বাবা
নেশা একটা আছে, বড় পুরানো নেশা
কিছুতেই ছাড়িতে পারিনা সেই নেশা
তোর জন্মের পর থেকে সারাক্ষণ তোকে দেখার নেশা
কিছুতেই ছাড়িতে পারিনা বাপ, কিছুতেই ছাড়িতে পারিনা।।

অনন্ত আবুল হোসেন খোকন

অনন্ত
আবুল হোসেন খোকন

অনন্ত, মেহিদি পাতা দেখেছ নিশ্চয়?
উপরে সবুজ, ভেতরে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত-
নিজেকে আজকাল বড় বেশি মেহেদি পাতার মতো,
মনে হয় কেন?

উপরে আমি অথচ ভিতরে কষ্টের যন্ত্রনার-
এমন সব বড় বড় গর্ত যে-

তার সামনে দাড়াতে নিজেরী ভয় হয়, অনন্ত।
তুমি কেমন আছো?
বিরক্ত হচ্ছ না তো?

ভালোবাসা যে মানুষকে অসহায়ও করে তুলতে পারে-
সেদিন তোমায় দেখার আগ পর্যন্ত-
আমার জানা ছিলো না।
তোমার উদ্দাম ভালোবাসার দূতি-
জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলেছে আমার ভিতর-
আমার বাহির-
আমার হাতে গড়া আমার পৃথিবী।

অনন্ত, যেই মিথিলা শুখী হবে বলে-
ভালোবাসার পূর্ণ চঁন্দ গিলে খেয়ে-
ভেজা মেঘের মতো উড়তে উড়তে চলে গেল,
আজ অন্য শূন্য, অনন্তকে আরো শূন্য করে দিয়ে-
তার মুখে এসব কথা মানায় না,
আমি জানি-
কিন্তু আমি আর এভাবে এমন করে পারছি না
আমার চারদিকের দেয়াল জুড়ে থই থই করে-
আমার স্বপ্ন খুনের রক্ত।

উদাস দুপুরে বাতাসে শিষ দেয়
তোমার সেই ভালোবাসা
পায়ে পায়ে ঘুরে ফেরে ছায়ার মতোন-
তোমার স্বৃতি।
আমি আগলাতেও পারি না,
আমি ফেলতেও পারি না।
শুখী হতে চেয়ে এখন দাড়িয়ে আমি-
একলা আমি-
কষ্টের তুষার পাহারে।

অনন্ত তোমার সামনে দাড়ানোর কোন –
যোগ্যতাই আজ আমার অবশিষ্ট নেই।
তবুও,
তবুও তুমি একদিন বলেছিলে-
ভেজা মেঘের মতো-
অবুজ আকাশে উড়তে উড়তে-
জীবনের সুতোয় যদি টান পরে কখনো?
চলে এসো, চলে এসো-
বুক পেতে দেব-আকাশ বানাবো
আর হাসনা হেনা ফুটাবো।

সুতোয় আমার টান পরেছে অনন্ত,
তাই আজ আমার সবকিছু,
আমার এক রোখা জেদ,
তুমি হীনা শুখী অনেক স্বপ্ন!
সব, সবকিছু জলাঞ্জলী দিয়ে-
তোমার সামনে আমি নত জানু-
আমায় তোমাকে আর একবার ভিক্ষে দাও।
কথা দিচ্ছি- তোমার অমর্যাদা হবে না কোনদিন।

অনন্ত, আমি জানি-
এখন তুমি একলা পাষান কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াও,
প্রচন্ড এক অভিমানে-
ক্ষনে ক্ষনে গর্জে উঠে অগ্নিগিরি।
কেউ জানে না, আমি জানি-
কেন তোমার মনের মাঝে মন থাকে না,
ঘরের মাঝে ঘর থাকে না,
উঠোন জোরার উপর কলস-
তুলসি তলের ঝড়া পাতা,
কুয়ো তলার শূন্য বালতি-
বাসন-কোসন, পূর্নিমা-অমাবর্ষা,
একলা ঘরে এই অনন্ত-
একা শুয়ে থাকা।
কেউ জানে না, আমি জানি-
কেন তুমি এমন করে কষ্ট পেলে-
সব হরিয়ে বুকের তলের চিতানলে-
কেন তুমি নষ্ট হলে?
কার বিহনে চুপি চুপি, ধীরে ধীরে-
কেউ জানে না, আমি জানি-
আমিই জানি।

আগামি শনিবার ভোরের ট্রেনে তোমার কাছে আসছি।
অনন্ত, আমার আর কিছু না দাও- অন্তত শাস্তিটুকু দিও।
ভালো থেকো!
তোমারি হারিয়ে যাওয়া মিথিলা।

যাবার দিন ............রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যাবার দিন
............রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যাবার দিনে এই কথাটি বলে যেন যাই -
যা দেখেছি, যা পেয়েছি, তুলনা তার নাই।
এই জ্যোতিসমুদ্র মাঝে যে শতদল পদ্ম রাজে
তারি মধু পান করেছি, ধন্য আমি তাই।
যাবার দিনে এই কথাটি জানিয়ে যেন যাই।।

বিশ্বরূপের খেলাঘরে কতই গেলেম খেলে,

...
অপরূপকে দেখে গেলেম দুটি নয়ন মেলে।
পরশ যাঁরে যায় না করা সকল দেহে দিলেন ধরা,
এইখানে শেষ করেন যদি শেষ করে দিন তাই -
যাবার বেলা এই কথাটি জানিয়ে যেন যাই।।

কান্ডারী হুশিয়ার! ............কাজী নজরুল ইসলাম

কান্ডারী হুশিয়ার!
............কাজী নজরুল ইসলাম

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!

দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন।
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার

গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!
কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান
আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!

ফেরীঅলা .........................হেলাল হাফিজ

ফেরীঅলা
.........................হেলাল হাফিজ
কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট !

লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

ঘরের কষ্ট পরেরর কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট
দাড়ির কষ্ট
চোখের বুকের নখের কষ্ট,
একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট
অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,
ভুল রমণী ভালোবাসার
ভুল নেতাদের জনসভার
হাইড্রোজনে দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট
পথের এবং পায়ের কষ্ট
অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট
কষ্ট নেবে কষ্ট ।

আর কে দেবে আমি ছাড়া
আসল শোভন কষ্ট,
কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন
আমার মত ক’জনের আর
সব হয়েছে নষ্ট,
আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট ।

হে মহাজীবন –সুকান্ত ভট্টাচার্য

হে মহাজীবন
–সুকান্ত ভট্টাচার্য

হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক

গদ্যের করা হাতুড়িকে আজ হানো।
প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা-
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়ঃ
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।।

পাঞ্জেরি ........ফররুখ আহমেদ

পাঞ্জেরি
........ফররুখ আহমেদ

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?

তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষে
কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?
এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব
তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব
অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী।
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
বন্দরে বসে যাত্রীরা দিন গোনে,
বুঝি মৌসুমী হাওয়ায় মোদের জাহাজের ধ্বনি শোনে,
বুঝি কুয়াশায়, জোছনা- মায়ায় জাহাজের পাল দেখে।
আহা, পেরেশান মুসাফির দল।
দরিয়া কিনারে জাগে তক্দিরে
নিরাশায় ছবি এঁকে!
পথহারা এই দরিয়া- সোঁতারা ঘুরে
চলেছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
একাকী রাতের গান জুলমাত হেরি!

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
শুধু গাফলতে শুধু খেয়ালের ভুলে,
দরিয়া- অথই ভ্রান্তি- নিয়াছি ভুলে,
আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী।
মোদের খেলায় ধুলায় লুটায়ে পড়ি।
কেটেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী।
সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি,
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দনধ্বনি আওয়াজ শুনছি তারি।
ওকি বাতাসের হাহাকার,- ও কি
রোনাজারি ক্ষুধিতের!
ও কি দরিয়ার গর্জন,- ও কি বেদনা মজলুমের!
ও কি ধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী।

পাঞ্জেরি!
জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি,
জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি!
দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরি, কত দেরি!!

দারিদ্র্য কাজী নজরুল ইসলাম

দারিদ্র্য ................
কাজী নজরুল ইসলাম.........................

হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্‌।
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কন্টক-মুকুট শোভা।-দিয়াছ, তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!
দুঃসহ দাহনে তব হে দর্পী তাপস,

অম্লান স্বর্ণেরে মোর করিলে বিরস,
অকালে শুকালে মোর রূপ রস প্রাণ!
শীর্ণ করপুট ভরি’ সুন্দরের দান
যতবার নিতে যাই-হে বুভুক্ষু তুমি
অগ্রে আসি’ কর পান! শূন্য মরুভূমি
হেরি মম কল্পলোক। আমার নয়ন
আমারি সুন্দরে করে অগ্নি বরিষণ!

বেদনা-হলুদ-বৃন্ত কামনা আমার
শেফালির মত শুভ্র সুরভি-বিথার
বিকশি’ উঠিতে চাহে, তুমি হে নির্মম,
দলবৃন্ত ভাঙ শাখা কাঠুরিয়া সম!
আশ্বিনের প্রভাতের মত ছলছল
ক’রে ওঠে সারা হিয়া, শিশির সজল

টলটল ধরণীর মত করুণায়!
তুমি রবি, তব তাপে শুকাইয়া যায়
করুণা-নীহার-বিন্দু! ম্লান হ’য়ে উঠি
ধরণীর ছায়াঞ্চলে! স্বপ্ন যায় টুটি’
সুন্দরের, কল্যাণের। তরল গরল
কন্ঠে ঢালি’ তুমি বল, ‘অমৃতে কি ফল?
জ্বালা নাই, নেশা নাই. নাই উন্মাদনা,-
রে দুর্বল, অমরার অমৃত-সাধনা
এ দুঃখের পৃথিবীতে তোর ব্রত নহে,
তুই নাগ, জন্ম তোর বেদনার দহে।
কাঁটা-কুঞ্জে বসি’ তুই গাঁথিবি মালিকা,
দিয়া গেনু ভালে তোর বেদনার টিকা!….
গাহি গান, গাঁথি মালা, কন্ঠ করে জ্বালা,
দংশিল সর্বাঙ্গে মোর নাগ-নাগবালা!….

ভিক্ষা-ঝুলি নিয়া ফের’ দ্বারে দ্বারে ঋষি
ক্ষমাহীন হে দুর্বাসা! যাপিতেছে নিশি
সুখে রব-বধূ যথা-সেখানে কখন,
হে কঠোর-কন্ঠ, গিয়া ডাক-‘মূঢ়, শোন্‌,
ধরণী বিলাস-কুঞ্জ নহে নহে কারো,
অভাব বিরহ আছে, আছে দুঃখ আরো,
আছে কাঁটা শয্যাতলে বাহুতে প্রিয়ার,
তাই এবে কর্‌ ভোগ!-পড়ে হাহাকার
নিমেষে সে সুখ-স্বর্গে, নিবে যায় বাতি,
কাটিতে চাহে না যেন আর কাল-রাতি!
চল-পথে অনশন-ক্লিষ্ট ক্ষীণ তনু,
কী দেখি’ বাঁকিয়া ওঠে সহসা ভ্রূ-ধনু,
দু’নয়ন ভরি’ রুদ্র হানো অগ্নি-বাণ,
আসে রাজ্যে মহামারী দুর্ভিক্ষ তুফান,
প্রমোদ-কানন পুড়ে, উড়ে অট্টালিকা,-
তোমার আইনে শুধু মৃত্যু-দন্ড লিখা!

বিনয়ের ব্যভিচার নাহি তব পাশ,
তুমি চান নগ্নতার উলঙ্গ প্রকাশ।
সঙ্কোচ শরম বলি’ জান না ক’ কিছু,
উন্নত করিছ শির যার মাথা নীচু।
মৃত্যু-পথ-যাত্রীদল তোমার ইঙ্গিতে
গলায় পরিছে ফাঁসি হাসিতে হাসিতে!
নিত্য অভাবের কুন্ড জ্বালাইয়া বুকে
সাধিতেছ মৃত্যু-যজ্ঞ পৈশাচিক সুখে!
লক্ষ্মীর কিরীটি ধরি, ফেলিতেছ টানি’
ধূলিতলে। বীণা-তারে করাঘাত হানি’
সারদার, কী সুর বাজাতে চাহ গুণী?
যত সুর আর্তনাদ হ’য়ে ওঠে শুনি!
প্রভাতে উঠিয়া কালি শুনিনু, সানাই
বাজিছে করুণ সুরে! যেন আসে নাই
আজো কা’রা ঘরে ফিরে! কাঁদিয়া কাঁদিয়া
ডাকিছে তাদেরে যেন ঘরে ‘সানাইয়া’!
বধূদের প্রাণ আজ সানা’য়ের সুরে
ভেসে যায় যথা আজ প্রিয়তম দূরে
আসি আসি করিতেছে! সখী বলে, ‘বল্‌
মুছিলি কেন লা আঁখি, মুছিলি কাজল?….

শুনিতেছি আজো আমি প্রাতে উঠিয়াই
‘ আয় আয়’ কাঁদিতেছে তেমনি সানাই।
ম্লানমুখী শেফালিকা পড়িতেছে ঝরি’
বিধবার হাসি সম-স্নিগ্ধ গন্ধে ভরি’!
নেচে ফেরে প্রজাপতি চঞ্চল পাখায়
দুরন্ত নেশায় আজি, পুষ্প-প্রগল্‌ভায়
চুম্বনে বিবশ করি’! ভোমোরার পাখা
পরাগে হলুদ আজি, অঙ্গে মধু মাখা।

উছলি’ উঠিছে যেন দিকে দিকে প্রাণ!
আপনার অগোচরে গেয়ে উঠি গান
আগমনী আনন্দের! অকারণে আঁখি
পু’রে আসে অশ্রু-জলে! মিলনের রাখী
কে যেন বাঁধিয়া দেয় ধরণীর সাথে!
পুষ্পঞ্জলি ভরি’ দু’টি মাটি মাখা হাতে
ধরণী এগিয়ে আসে, দেয় উপহার।
ও যেন কনিষ্ঠা মেয়ে দুলালী আমার!-
সহসা চমকি’ উঠি! হায় মোর শিশু
জাগিয়া কাঁদিছ ঘরে, খাওনি ক’ কিছু
কালি হ’তে সারাদিন তাপস নিষ্ঠুর,
কাঁদ’ মোর ঘরে নিত্য তুমি ক্ষুধাতুর!

পারি নাই বাছা মোর, হে প্রিয় আমার,
দুই বিন্দু দুগ্ধ দিতে!-মোর অধিকার
আনন্দের নাহি নাহি! দারিদ্র্য অসহ
পুত্র হ’য়ে জায়া হয়ে কাঁদে অহরহ
আমার দুয়ার ধরি! কে বাজাবে বাঁশি?
কোথা পাব আনন্দিত সুন্দরের হাসি?
কোথা পাব পুষ্পাসব?-ধুতুরা-গেলাস
ভরিয়া করেছি পান নয়ন-নির্যাস!….
আজো শুনি আগমনী গাহিছে সানাই,
ও যেন কাঁদিছে শুধু-নাই কিছু নাই!

4Them Who Use PC.More than 100 Keyboard Shortcuts.

Keyboard Shortcuts (Microsoft Windows) 1. CTRL+C (Copy) 2. CTRL+X (Cut) ... 3. CTRL+V (Paste) 4. CTRL+Z (Undo) 5. DELETE (Delete) 6. SHIFT+DELETE (Delete the selected item permanently without placing the item in the Recycle Bin) 7. CTRL while dragging an item (Copy the selected item) 8. CTRL+SHIFT while dragging an item (Create a shortcut to the selected item) 9. F2 key (Rename the selected item) 10. CTRL+RIGHT ARROW (Move the insertion point to the beginning of the next word)

Wednesday, October 24, 2012

100 Questions for Kids


100 Questions for Kids –
Easy Conversation Starters in English


Kids can be coy, it’s not always easy for them to have conversations with peers or adults. This list of 100 get to know you questions can help.


100 Questions to Get Kids Talking

Questions About The Previous Week:
What did you do this week?
What was something fun you did this week?
What was something you had to do this week that you didn’t care for?
Did you see anyone this week that you haven’t seen for a while?
Did you go visit anyone this week?
Did anyone come to visit your house this week?
Do you have any exciting stories to tell from the past week?


Questions About Their Family
How many brothers and sisters do you have?
Are your brothers and sisters older or younger?
What are their names?
How do you like being a big/litter sister/brother?
What are your parents’ names?
Where does your Dad work / what does your dad do for a job?
Where does your Mom work / what does your dad do for a job?
What is your favorite thing to do as a family?
Do you have any pets?
What kind of pets do you have?
What are the names of your pets?


Questions About Them
How old are you?
When is/was your birthday?
What did you do for last birthday?

Tuesday, October 23, 2012

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা - শামসুর রাহমান


তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা

               শামসুর রাহমান


তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ? আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো, সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর। তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,

Tuesday, October 16, 2012

সর্বশেষ জরিপে ওবামা এখনও এগিয়ে : ওবামার ইলেকটোরাল ভোট ২৭৫ রমনির ২০৬

 

স্বাধীনতা তুমি

 শামসুর রাহমান

 

স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান। স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা- স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা স্বাধীনতা তুমি পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল। স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি। স্বাধীনতা তুমি রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার। স্বাধীনতা তুমি মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী। স্বাধীনতা তুমি অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক। স্বাধীনতা তুমি বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ। স্বাধীনতা তুমি চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ। স্বাধীনতা তুমি কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা। স্বাধীনতা তুমি শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন। স্বাধীনতা তুমি উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন। স্বাধীনতা তুমি বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ। স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার। স্বাধীনতা তুমি গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল, হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম। স্বাধীনতা তুমি খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা, খুকীর অমন তুলতুলে গালে রৌদ্রের খেলা। স্বাধীনতা তুমি বাগানের ঘর, কোকিলের গান, বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা, যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

www.fb.com/jrliton77 

Monday, October 15, 2012

পাছে লোকে কিছু বলে - কামিনী রায়

পাছে লোকে কিছু বলে 

কামিনী রায়


করিতে পারি না কাজ সদা ভয় সদা লাজ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে – পাছে লোকে কিছু বলে।

কবর .....জসীমউদ্দিন

     https://priyokobita.files.wordpress.com/2010/12/jibanananda_das.jpg                     
                           কবর
                      জসীমউদ্দিন

এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।

বাংলার মুখ -জীবনানন্দ দাস

বাংলার মুখ -জীবনানন্দ দাস বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে ভোরের দয়েলপাখি - চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ; ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে; মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে - কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায় - সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়, শ্যামার নরম গান শুনেছিল - একদিন অমরায় গিয়ে ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায় বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।

পতিতা .................জীবনানন্দ দাশ

পতিতা .................জীবনানন্দ দাশ আগার তাহার বিভীষিকাভরা, জীবন মরণময়! সমাজের বুকে অভিশাপ সে যে – সে যে ব্যাধি, সে যে ক্ষয়; প্রেমের পসরা ভেঙে ফেলে দিয়ে ছলনার কারাগারে রচিয়াছে সে যে, দিনের আলোয় রুদ্ধ ক’রেছে দ্বার! সূর্যকিরণ চকিতে নিভায়ে সাজিয়াছে নিশাচর, কালনাগিনীর ফনার মতন নাচে সে বুকের পর! চক্ষে তাহার কালকুট ঝরে, বিষপঙ্কিল শ্বাস, সারাটি জীবন মরীচিকা তার প্রহসন-পরিহাস! ছোঁয়াচে তাহার ম্লান হয়ে যায় শশীতারকার শিখা, আলোকের পারে নেমে আসে তার আঁধারের যবনিকা! সে যে মন্বন্তর, মৃত্যুর দূত, অপঘাত, মহামারী- মানুষ তবু সে, তার চেয়ে বড় – সে যে নারী, সে যে নারী!

বনলতা সেন -জীবনানন্দ দাশ

বনলতা সেন -জীবনানন্দ দাশ হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে; আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন । চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর, তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, 'এতদিন কোথায় ছিলেন?' পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন। সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল; পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল; সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী - ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন; থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

দুই বিঘা জমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দুই বিঘা জমি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।”
কহিলাম আমি, “তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই।
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো‐জোর মরিবার মতো ঠাঁই।”
শুনি রাজা কহে, “বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দীঘে সমান হইবে টানা—
ওটা দিতে হবে।” কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজলচক্ষে, “করুণ রক্ষে গরিবের ভিটেখানি!
সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া!
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!”
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে;
কহিলেন শেষে ক্রূর হাসি হেসে, “আচ্ছা, সে দেখা যাবে।”

পরে মাস‐দেড়ে ভিটেমাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে—
করিল ডিক্রি সকলি বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি!
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য—
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য!
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি,
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি।
হাটে মাঠে বাটে এইমত কাটে বছর পনেরো‐ষোলো,
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হল।

নমোনমো নমঃ সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি—
গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধূলি—
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ—
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল, নিশীথশীতল স্নেহ।
বুকভরা মধু, বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে—
“মা” বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে,
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি রথতলা করি বামে—
রাখি হাটখোলা, নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে।

ধিক্ ধিক্ ওরে, শত ধিক্ তোরে, নিলাজ কুলটা ভূমি,
যখনি যাহার তখনি তাহার— এই কি জননী তুমি!
সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফলফুল শাক‐পাতা!
আজ কোন্ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ—
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন,
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী, হাসিয়া কাটাস দিন!
ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন—
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সেদিনের কোনো চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি, ক্ষুধাহরা সুধারাশি।
যত হাসো আজ যত করো সাজ ছিলে দেবী— হলে দাসী।

বিদীর্ণ‐হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি;
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে, সেই আমগাছ, একি!
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালক‐কালের কথা।
সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিক ঘুম—
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম;
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা‐পলায়ন—
ভাবিলাম, হায়, আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন!
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে;
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা—
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা!

হেনকালে হায় যমদূত‐প্রায় কোথা হতে এল মালী,
ঝুঁটি‐বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি!
কহিলাম তবে, “আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব—
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব!”
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ;
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ‐সাথে ধরিতেছিলেন মাছ।
শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, “মারিয়া করিব খুন!”
বাবু যত বলে পারিষদ‐দলে বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, “শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!”
বাবু কহে হেসে, “বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়।”
আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে!
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!

যদি আমি ঝরে যাইএকদিন

যদি আমি ঝরে যাইএকদিন ......জীবনানন্দ দাশ যদি আমি ঝরে যাই একদিন কার্তিকের নীল কুয়াশায়; যখন ঝরিছে ধান বাংলার ক্ষেতে-ক্ষেতে ম্লান চোখ বুজে, যখন চড়াই পাখি কাঁঠালীচাপাঁর নীড়ে ঠোঁট আছে গুজে, যখন হলুদ পাতা মিশিতেছে খয়েরি পাতায়, যখন পুকুরে হাঁস সোঁদা জলে শিশিরের গন্ধ শুধু পায়, শামুক গুগলিগুলো পড়ে আছে শ্যাওলার মলিন সবুজে- তখন আমারে যদি পাও নাকো লালশাক-ছাওয়া মাঠে খুঁজে, ঠেস্‌ দিয়ে বসে আর থাকি নাকো যদি বুনো চালতার গায়ে, তাহলে জানিও তুমি আসিয়াছে অন্ধকার মৃত্যুর আহ্বান- যার ডাক শুনে রাঙা রৌদ্রেরো চিল আর শালিখের ভিড় একদিন ছেড়ে যাবে আম জাম বনে নীল বাংলার তীর, যার ডাক শুনে আজ ক্ষেতে-ক্ষেতে ঝরিতেছে খই আর মৌরির ধান;- কবে যে আসিবে মৃত্যু; বাসমতী চালে-ভেজা শাদা হাতখান- রাখো বুকে, হে কিশোরী, গোরোচনারূপে আমি করিব যে ম্লান।

খোদার প্রেমের শারাব পিয়ে - কাজী নজরুল ইসলাম

     খোদার প্রেমের শারাব পিয়ে

        কাজী নজরুল ইসলাম

খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে, বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে।
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ, এল যে এই পথ ধরে।।
দুনিয়াদারীর শেষে আমার,নামাজ রোজার বদলাতে।
চাইনা বেহেশত খোদার কাছে, নিত্য মোনাজাত করে।।
কায়েছ যেমন লায়লী লাগি,লভিল মজনু খেতাব।

কেউ কথা রাখেনি

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী আর এলোনা পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি। মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে! নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে? একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি ভিতরে রাস-উৎসব অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা কত রকম আমোদে হেসেছে আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি! বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও… বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস- উৎসব আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা! বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল, যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে! ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড় বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ এখনো সে যে-কোনো নারী। কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বিদায় বেলায় - কাজী নজরুল ইসলাম

                                                             বিদায় বেলায়

                                                        কাজী নজরুল ইসলাম

 

তুমি অমন ক’রে গো বারে বারে জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না, জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না। ঐ কাতর কন্ঠে থেকে থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না, শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না।। হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা, আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না। ঐ ব্যথাতুর আঁখি কাঁদো-কাঁদো মুখ দেখি আর শুধু হেসে যাও,আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না। চলার তোমার বাকী পথটুকু- পথিক! ওগো সুদূর পথের পথিক-

Tuesday, October 09, 2012

ঈশ্বর - কাজী নজরুল ইসলাম

             www.fb.com/jrliton77             

                                 ঈশ্বর

                             কাজী নজরুল ইসলাম

 

কে তুমি খুঁজিছ জগদীশ ভাই আকাশ পাতাল জুড়ে’
কে তুমি ফিরিছ বনে-জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড়-চূড়ে?
হায় ঋষি দরবেশ,
বুকের মানিকে বুকে ধ’রে তুমি খোঁজ তারে দেশ-দেশ।

Monday, October 08, 2012

নারী – কাজী নজরুল ইসলাম

 

          নারী

   কাজী নজরুল ইসলাম

 

সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি, অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী। নরককুন্ড বলিয়া কে তোমা’ করে নারী হেয়-জ্ঞান? তারে বলো, আদি পাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান। অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর নহে নারী নহে, ক্লীব সে, তাই সে নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে। এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,

Saturday, October 06, 2012

অভিশাপ – কাজী নজরুল ইসলাম

           www.fb.com/jrliton77  
            অভিশাপ

      কাজী নজরুল ইসলাম

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,  

শিক্ষকের মর্যাদা সমুন্নত রাখার দাবি

শিক্ষাক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্য দূর করে শিক্ষকদের আর্থসামজিক মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাবিদেরা। প্রতিবছর সরকারিভাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০১২’ উপলক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘আমার অধিকার’ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই আহ্বান জানানো হয়। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সম্বয়কারী অধ্যাপক কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, “শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য না কমে তা বরং বেড়েছে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণে ক্রমবর্ধমান সামাজিক উপদ্রব হিসেবে দেখা দিয়েছে।” বৃহস্পতিবার নন-এমপিও শিক্ষকদের সমাবেশে পুলিশের ‘হামলার’ নিন্দা জানান তিনি। পাঠদানের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন কোনো কাজে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরকার বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয় বর্হিভূত কাজের দায়িত্ব দিয়ে থাকে যা পাঠদান কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করে।” জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন, শিক্ষাবিদ এ এন রাশেদা, ‘আমার অধিকার’ এর চেয়ারপার্সন ড. নিলুফার বানুসহ বিভিন্ন শিক্ষক নেতারা সভায় বক্তব্য রাখেন। ‘শিক্ষার জন্য আমরা, শিক্ষকদের পাশে আমরা’ শীর্ষক এ সভায় বক্তারা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে অন্যান্য দাবির সাথে শিক্ষক প্রশিক্ষক পুল তৈরি, প্রাথমিক শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ ‘শিক্ষা আইন’ ও স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবিও জানান। শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকার উন্নয়নে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে বলেও মত দেন তারা।

সবুজের অভিযান - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  সবুজের অভিযান


        রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা,
ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,
আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।
রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে

Friday, October 05, 2012

জীবনের হিসাব - সুকুমার রায়


                জীবনের হিসাব
                   সুকুমার রায়

বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই চড়ি শখের বোটে
মাঝিরে কন, "বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?"

Thursday, October 04, 2012

আমি চেয়ে আছি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


      আমি চেয়ে আছি

      রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমি চেয়ে আছি তোমাদের সবা-পানে।
স্থান দাও মোরে সকলের মাঝখানে।
নীচে সব-নীচে এ ধূলির ধরণীতে
যেথা আসনের মূল্য না হয় দিতে,
যেথা রেখা দিয়ে ভাগ করা নাই কিছু,

আত্মত্রাণ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

www.fb.com/jrliton77

     আত্মত্রাণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিপদে মোরে রক্ষা করো
এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে
নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,

Wednesday, October 03, 2012

প্রাণ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

              www.fb.com/jrliton77    
                    প্রাণ

   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে ,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই ।

Tuesday, October 02, 2012

বঙ্গমাতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

           বঙ্গমাতা

   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পূণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে।
হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি, তব গৃহক্রোড়ে
চিরশিশু করে আর রাখিয়ো না ধরে।