ঈদের নামায বছরে পড়তে হয় মাত্র দুইবার, ফলে অনেকেই এর নিয়মকানুন একটু গুলিয়ে ফেলেন। ঈদের নামায পড়ার কয়েকটি পদ্ধতি আছে। আমি কেবল যে পদ্ধতিটি বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত (অতিরিক্ত ৬
তাকবিরসহ)-সেটা নিয়ে আলোচনা করবো। অনেকেই কখন হাত বাঁধবেন, কখন হাত না বেঁধে ছেড়ে দেবেন এটা নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন, এমনকি অনেকে একবার ডানপাশের লোকেরটা অনুসরণ করেন আরেকবার বামপাশের লোকেরটা অনুসরণ করেন। অথচ বিষয়টা খুবই সহজ।
নামাযের শুরুতে আমরা যে তাকবির দেই (আল্লাহু আকবার বলি) তাকে তাকবিরে তাহরিমা বা প্রথম তাকবির বলা হয়। যে কোন নামাযে এই তাকবির দেওয়া ফরয। ঈদের নামযে এই তাকবির এবং অন্যান্য সাধারণ তাকবিরের সাথে অতিরিক্ত ৬টি তাকবির দিতে হয়।
প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত ৩
তাকবির
(ছানা
পড়ার
পর)
দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত ৩
তাকবির
(সূরা
ফাতিহা
+ অন্য
সূরা
পড়ার
পর)
মনে
রাখার
বিষয়
হলো:
১. যে তাকবিরের পরে সূরা/ছানা পড়তে হয় সেই তাকবিরের পর হাত বাঁধতে হয়।
২. যে তাকবিরের পরে সূরা/ছানা পড়তে হয় না, সেই তাকবিরের পর হাত বাঁধতে হয় না।
এই দুইটা বিষয় মনে রাখলে হাত বাঁধা বা ছাড়া নিয়ে কোন সমস্যা আর থাকবে না। আসুন একটু বিস্তারিতভাবে দেখি:
সাধারণ নামায
|
ঈদের নামায
|
|
১ম রাকাত ->
|
তাকবিরে তাহরিমা (১ম তাকবির)
|
তাকবিরে তাহরিমা (১ম তাকবির)
|
হাত বাঁধা
|
হাত বাঁধা (কারণ এর পর ছানা পড়তে হবে)
|
|
ছানা পড়া
|
ছানা পড়া
|
|
১ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া
|
||
হাত ছেড়ে দেওয়া(কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)
|
||
২য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া
|
||
হাত ছেড়ে দেওয়া(কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)
|
||
৩য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া
|
||
হাত বেঁধে ফেলা (কারণ এর পর সূরা পড়া হবে)
|
||
সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো
|
সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো
|
|
তাকবির দেওয়া
|
তাকবির দেওয়া
|
|
রুকু করা
|
রুকু করা
|
|
রুকু থেকে দাঁড়ানো
|
রুকু থেকে দাঁড়ানো
|
|
সিজদায় যাওয়া
|
সিজদায় যাওয়া
|
|
২টি সিজদা করা
|
২টি সিজদা করা
|
|
তাকবির দেওয়া (২য় রাকাতের জন্য)
|
তাকবির দেওয়া (২য় রাকাতের জন্য)
|
|
২য় রাকাত ->
|
হাত বেঁধে দাঁড়ানো
|
হাত বেঁধে দাঁড়ানো
|
সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো
|
সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো
|
|
৪র্থ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া
|
||
হাত ছেড়ে দেওয়া(কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)
|
||
৫ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া
|
||
হাত ছেড়ে দেওয়া(কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)
|
||
৬ষ্ঠ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া
|
||
হাত না বাঁধা (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না, রুকুতে যেতে হচ্ছে)
|
||
রুকু করা
|
রুকু করা
|
|
রুকু থেকে দাঁড়ানো
|
রুকু থেকে দাঁড়ানো
|
|
সিজদায় যাওয়া
|
সিজদায় যাওয়া
|
|
২টি সিজদা করা
|
২টি সিজদা করা
|
|
শেষ বৈঠক + সালাম ফিরানো
|
শেষ বৈঠক + সালাম ফিরানো
|
ঈদের
নামাজের নিয়ম
ইমামের পেছনে কেবলামুখি
হয়ে ঈদুল ফিতরের দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ ৬ তাকবিরের সঙ্গে আদায়া করছি- এরূপ নিয়ত
করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত তুলে তাহরিমা বাঁধবে। তারপর সানা
(সুবহানাকাল্লাহুম্মা...) পুরোটা পড়বে। এরপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহর আগে
তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবির বলবে। প্রথম দু’বার কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ছেড়ে
দেবে।
কিন্তু তৃতীয়বার বলে
হাত বেঁধে নেবে। প্রত্যেক তাকবিরের পর তিনবার সুবহানাল্লাহ বলা যায় পরিমাণ থামবে।
তারপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়ে সূরায়ে ফাতেহার পরে একটা সূরা মেলাবে। এরপর
রুকু, সিজদা করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। এবার অন্যান্য নামাজের মতো
বিসমিল্লাহর পরে সূরা ফাতেহা পড়ে আরেকটা সূরা মেলাবে। তারপর তিনবার ‘আল্লাহু
আকবার’ বলার মাধ্যমে তিনটা তাকবির সম্পন্ন করবে। এখানে প্রতি তাকবিরের পর হাত ছেড়ে
দেবে এবং চতুর্থবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত না বেঁধে রুকুতে চলে যাবে। এরপর সেজদা
এবং আখেরি বৈঠক করে যথারীতি সালাম ফিরায়ে নামাজ শেষ করবে।
ঈদের জামাত সম্পর্কীয়
মাসয়ালা
মাসয়ালা: ইমাম সাহেব জুমার মতো দু’টি খুতবা দেবেন। তবে জুমার খুতবা দেওয়া ফরজ আর ঈদের খুতবা দেওয়া সুন্নত। কিন্তু ঈদের খুতবা শুনা ওয়াজিব। ওই সময় কথাবার্তা, চলাফেরা, টাকা উঠানো ইত্যাদি যেকোনো কাজ নিষেধ।
মাসয়ালা: ইমাম সাহেব জুমার মতো দু’টি খুতবা দেবেন। তবে জুমার খুতবা দেওয়া ফরজ আর ঈদের খুতবা দেওয়া সুন্নত। কিন্তু ঈদের খুতবা শুনা ওয়াজিব। ওই সময় কথাবার্তা, চলাফেরা, টাকা উঠানো ইত্যাদি যেকোনো কাজ নিষেধ।
মাসয়ালা: ঈদের নামাজের পূর্বে মহিলা হোক কিংবা
পুরুষ, বাড়িতে কিংবা মসজিদে অথবা ঈদগাহে নফল নামাজ পড়া মাকরূহ।
মাসয়ালা: সম্ভব হলে এলাকার সবাই একস্থানে একত্রে
ঈদের নামাজ পড়া উত্তম। তবে কয়েক জায়গায় পড়াও জায়েজ।
মাসয়ালা: ঈদের নামাজ না পড়তে পারলে কিংবা নামাজ নষ্ট হয়ে
গেলে তার কাজা করতে হবে না, যেহেতু ঈদের নামাজের জন্য জামাত শর্ত। তবে বেশকিছু
লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে তারা অন্য একজনকে ইমাম বানিয়ে নামাজ
পড়তে পারবেন।
মাসয়ালা: ১ শাওয়ালের দ্বিপ্রহরের পূর্বে শরিয়তসম্মত কোনো
কারণে ঈদের নামাজ না পড়তে পারলে শাওয়ালের ২ তারিখে পড়ার অনুমতি আছে। এরপর আর নামাজ
পড়া যাবে না।
মাসয়ালা: কেউ ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পেলে
সালামের পর যখন ওই ব্যক্তি ছুটে যাওয়া রাকাতের (প্রথম রাকাত) জন্য দাঁড়াবে তখন
প্রথমে সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা), তারপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়ে ফাতেহা
ও কেরাতের পর রুকুর পূর্বে তাকবির বলবে। ফাতেহার আগে নয়।
মাসয়ালা: ইমাম তাকবির ভুলে গেলে রুকুতে গিয়ে বলবে,
রুকু ছেড়ে দাঁড়াবে না। তবে রুকু ছেড়ে দাঁড়িয়ে তাকবির বলে আবার রুকুতে গেলেও নামাজ
নষ্ট হবে না। বেশি লোক হওয়ার কারণে সহু সিজদাও দিতে হবে না।
মাসয়ালা: কোনো লোক যদি ইমাম সাহেবকে তাকবির শেষ হওয়ার পরে
পায় সে তাকবিরে তাহরিমা বেঁধে প্রথমে ওয়াজিব তিন তাকবির বলে নিবে। আর রুকুতে পেলে
যদি দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, তাকবির বলেও ইমাম সাহেবকে রুকুতে পাবে তাহলে তাহরিমা বেঁধে
দাঁড়িয়ে তাকবির বলে নেবে, তারপর রুকুতে যাবে। আর দাঁড়িয়ে তাকবির পড়তে পড়তে ইমাম
সাহেবকে রুকুতে না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তাহরিমা বেঁধে রুকুতে চলে যাবে এবং রুকুর
তাসবিহ না বলে প্রথমে তাকবির বলে নেবে, রুকুতে তাকবির বলার সময় হাত উঠাবে না এবং
সময় পেলে রুকুর তাসবিহ পড়বে, না পেলে না পড়বে। আর তাকবির শেষ করার পূর্বেই যদি
ইমাম রুকু থেকে মাথা তুলে ফেলেন তাহলে মুক্তাদিও তুলে ফেলবে। তাকবির বাকি থাকলে তা
ক্ষমাযোগ্য।
(সংগৃহীত)
(সংগৃহীত)
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
এমএইউ/
এমএইউ/
কাজী আবুল কালাম
সিদ্দীক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭-০৬-২৫
৬:১৭:৫৬ পিএম
No comments:
Post a Comment