প্রথমে
জায়নামাজে দাঁড়িয়ে জায়নামাযের দোয়া পড়তে হবে। এর পর নিয়ত করতে হবে।
জায়নামাযের
দোয়া :
اِنِّئْ وَجَّهْتُ
وَجْهِئَ لِلَّذِئْ
فَطَرَالسَّمَوَاتِ
وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا
وَّمَا اَنَا
مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
উচ্চারণ :
ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাসসামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানিফাও ওয়ামা
আনা মিনালমুশরিকীন।
অর্থ :
নিশ্চয়ই আমি তাঁর দিকে মুখ করলাম। যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, বস্তুত আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।
Surely I turned to him. Who
created the heavens and the earth, and I am not of the idolaters.
নিয়্যত
: কোন নামায পড়ার ইচ্ছা করার নাম হলো নিয়্যত। আমরা যে নামায পড়বো সে সম্পর্কে মনে
মনে স্থির করার পরে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরিমা বলে নামায শুরু করতে হবে।
যেমন-আমি ফযরের দুই রাকাত সুন্নাত নামায কেবলামুখী হয়ে পড়ছি। কেউ কেউ ইচ্ছা করলে
আরবীতেও নিয়্যত করতে পারেন।
দুই রাকা’আত নামায হলে رَكْعَتَئ “রাকা’আতাই”, তিন রাকা’আত নামায
হলে رَكْعَتَئ
‘রাকা’আতাই’-এর স্থলে ثلَاثَ رَكْعَاتِ‘‘ছালাছা রাক’আতি’’ এবং ৪
রাকাত হলে اَرْبَعْئَ رَكْعَاتِ “আরবা রাক‘আতি” বলতে হবে।
ফজর اَلْفَجْرِ – এর স্থলে যে ওয়াক্ত বা যে নামায পড়বে সে নাম বলতে হবে।
যেমন-যোহর হলে যোহর, আছর হলে আছর, মাগরেব হলে মাগরেব, এশা হলে এশা বলতে হবে। আর
নামায ফরয হলে সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি (رَسُوْل
ِاللهِ سُنَّةِ) এর স্থলে ফারদুল্লাহি (فَرْضُ اللهِ) ওয়াজিব হলে
ওয়াজিবুল্লাহি (وَاجٍبُ اللهِ) বলতে হবে।
(১) ফজরের নামাজ :
ক) ফজরের ২ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত
বাংলায় : নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তাআলা
মুতাও য়াজজিহান্ ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আক্ বার।
খ)ফজরের ২ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত (বাংলায়) :
নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, ফারজুল্লা-হি তায়ালা
মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আক্ বার।
**২. ইমামের পিছনে
নামায পড়িতে হলে : / নাওয়াইতু
আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই
সালাতিল ফাজরি, ফারজুল্লা-হি
তায়ালা এক্তাদাইতু বিহা-যাল
ইমামি মুতা ওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আক্ বার। /
***৩. ইমামতি করিতে
নিয়ত: /
নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই
সালাতিল ফাজরি, ফারজুল্লা-হি তায়ালা আনা ইমামুল্লিমান হাজারা ও
মাইয়্যাফজুরু মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আক্
বার। আকবার।/
নামাজের সুরা ও তাসবীহ সমূহের অর্থ
সুপ্রিয়
পাঠকবৃন্ধ, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!
আমরা
প্রতিদিন নামাজ পড়ি,কিন্তু নামাজে কি বলছি,কি করছি তা কিছুই জানি না। অধিকাংশ মানুষই নামাজে যে সুরা সমুহ ও তাসবিহ
গুলো পড়ছে তার অর্থ জানেনা। যার কারনে নামাজে অমনযোগী হয়। মনে হয় যে তোতা পাখির
মত শুধু বলেই যাচ্ছি, কিন্তু কি বলছি কিছুই জানি না,
তাহলে নামাজের মাঝে আল্লাহর প্রতি বিনয়, শ্রদ্ধা, ভয়, আত্ম-সমর্পন
আসবে কিভাবে? অথচ আল্লাহ সুবহানাতা’আলা বলেছেন “ধবংস ওই
নামাজি যে তার নামাজ সম্পর্কে বেখবর।”
নামাজে মনোযোগ আনতে হলে অবশ্যই নামাজে কি কি করছি তার অর্থ ভাল ভাবে জানতে হবে বুঝতে হবে।অর্থ যদি জানা থাকে এবং তা লক্ষ্য করে নামায আদায় করি, তাহলে আমাদের নামায আরো সুন্দর হবে।
নামাজের নিয়াত ও তাকবীরে
তাহঃরীমা:
নামাজের
ইচ্ছা করাই হচ্ছে নামাজের নিয়াত করা। মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়, তবে মুস্তাহাব।
সমস্ত নামাজেই ,নাওয়াইঃতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া’লা
(২ রাকাত হলে) রাক্ ‘য়াতাই ছালাতিল
(৩ রাকাত হলে) ছালাছা রাক্ ‘য়াতাই ছালাতিল
(৪ রাকাত হলে) আরবা রাক্ ‘য়াতাই ছালাতিল
(ওয়াক্তের
নাম) ফাজ্ রি/ জ্জুহরি / আ’ছরি / মাগরিবি / ইশাই / জুমুয়া’তি
(কি নামাজ
তার নাম) ফারদ্বুল্ল-হি / ওয়াজিবুল্ল-হি / সুন্নাতু রসূলিল্লাহি / নাফলি।
(সমস্ত
নামাজেই) তায়া’লা মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা জিহাতিল্ কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আক্
বার।
*বাংলায়
নিয়াত করতে চাইলে বলতে হবে :
আমি আল্লা-হ্’র উদ্দেশ্যে ক্কেবলা মুখী হয়ে, ফজরের/জোহরের/আসরের/মাফরিবের/ঈশার/জুময়ার/বি’তরের/তারআবি/তাহাজ্জুদের
(অথবা যে নামাজ হয় তার নাম)
২ র’কাত/৩র’কাত/৪ র’কাত (যে কয় রাকাত নামাজ তার নাম)
ফরজ/ওয়াজিব/সুন্নাত/নফল নামাজ পড়ার নিয়াত করলাম, আল্লাহু আক্ বার।
২ র’কাত/৩র’কাত/৪ র’কাত (যে কয় রাকাত নামাজ তার নাম)
ফরজ/ওয়াজিব/সুন্নাত/নফল নামাজ পড়ার নিয়াত করলাম, আল্লাহু আক্ বার।
তাকবীরে তাহরীমা : আল্লাহু আকবার, অর্থ-আল্লাহ মহান ।
সানা : (হাত
বাধার পর এই দোয়া পড়তে হয়)
উচ্চারণ
:-সুবহা-না কাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহাম্ দিকা ওয়াতাবারঅ কাস্ মুকা ওয়াতা’ আ-লা
জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুক।
অর্থ : হে আল্লাহ ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার মহিমা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বরকতময়, আপনার মাহাত্ম্য সর্বোচ্চ এবং আপনি ভিন্ন কেহই ইবাদতের যোগ্য নয় ।
তাআ’উজ : আউযুবিল্লা-হি
মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম ।
অর্থ : বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।
অর্থ : বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।
তাসমিয়া : বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম ।
অর্থ : পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি ।
অর্থ : পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি ।
এরপর
সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হয়, সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের পর
পবিত্র কোরআনের যে কোন জায়গা থেকে তিলাওয়াত করতে হয় ।
রুকুর তাসবীহ :
উচ্চারণ : সুবহা-না রব্বিয়াল্ আ’জ্বীম।
অর্থ : মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহাত্মতা ঘোষণা করছি ।
উচ্চারণ : সুবহা-না রব্বিয়াল্ আ’জ্বীম।
অর্থ : মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহাত্মতা ঘোষণা করছি ।
তাসমী
: (রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পড়তে হয়)
উচ্চারণ : সামি আল্লা হুলিমান হামিদাহ।
অর্থ : প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শোনেন ।
উচ্চারণ : সামি আল্লা হুলিমান হামিদাহ।
অর্থ : প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শোনেন ।
তাহমীদ
: (রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়)
উচ্চারণ-রাব্বানা লাকাল হামদ । অর্থ-হে আমার প্রভু, সমস্ত প্রশংসা আপনারই।
উচ্চারণ-রাব্বানা লাকাল হামদ । অর্থ-হে আমার প্রভু, সমস্ত প্রশংসা আপনারই।
সিজদার তাসবীহ :
উচ্চারণ : সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা।
উচ্চারণ : সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা।
অর্থ
: আমার প্রতিপালক যিনি সর্বশ্রেষ্ট, তারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি ।
দুই
সিজদার মাঝখানে পড়ার দোয়া :
উচ্চারণ
: আল্লাহু ম্মাগ ফিরলী ওয়ার হামনি ওয়ার যুক্কনী ।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে রিজিক দিন ।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে রিজিক দিন ।
তাশাহুদ
বা আত্তাহিয়্যাতু :
উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যাতু
লিল্লা-হি, ওয়াছ ছালা-ওয়াতু, ওয়াত-তাইয়্যিবা তু, আচ্ছালা মু আ’লাইকা,
আইয়্যুহান নাবিয়্যু, ওয়ারাহ
মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আচ্ছালামু আলাইনা, ওয়া আ’লা ইবাদিল্লা হিছ-ছা লিহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু,
ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু ।
অর্থ : আমাদের
সব সালাম শ্রদ্ধা, আমাদের সব নামাজ এবং সকল
প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবী, আপনার
প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত
হউক । আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ
(সঃ) আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল ।
দুরুদ শরীফ :
উচ্চারণ : আল্লহুম্মা ছাল্লি
আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আ’লা
ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজী-দ্ ।
আল্লাহুম্মা বারিক্ আ’লা মুহাম্মাদিওঁ
ওয়া আ’লা আ’লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আ’লা
ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ’লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ ।
অর্থ : হে
আল্লাহ,
দয়া ও রহমত করুন হযরত
মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন
রহমত করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি উত্তম গুনের আধার
এবং মহান।
হে
আল্লাহ,
বরকত নাযিল করুন
হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন
করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও
সম্মানের অধিকারী ।
দোয়ায়ে মাসূরাঃ
উচ্চারন : আল্লা-হুম্মা
ইন্নী জ্বলামতু নাফসী জুলমান কাছীরও ওয়ালা ইয়াগফিরু যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগ্
ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।
অর্থ : হে মহান আল্লাহ, আমি আমার নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি (অর্থাৎ অনেক গুনাহ/পাপ করেছি)
কিন্তু আপনি ব্যতীত অন্য কেহ গুনাহ মাফ করতে পারে না। অতএব হে আল্লাহ অনুগ্রহ
পূর্বক আমার গুনাহ মাফ করে দিন এবং আমার প্রতি সদয় হোন; নিশ্চই
আপনি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।
দোয়ায়ে
কুনুত :
(বিতরের
নামাজের পর ৩য় রাকায়াতে সূরা ফাতিহা ও অন্য কিরআত পড়ার পর এই দোয়া পড়তে হয়)।
উচ্চারণ : “আল্লাহুম্মা
ইন্না নাসতা’ঈনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়া
নু’মিনু বিকা ওয়া না তা ওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া
নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া
নাখ লা, ওয়া নাত রুকু মাইয়্যাফ জুরুকা। আল্লাহুম্মা
ইয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুছাল্লি ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখ’শা আযাবাকা ইন্না আযা-বাকা
বিল কুফফা-রি মুল হিক ।”
অর্থ : হে
আল্লাহ,
আমারা আপনার নিকট সাহায্য চাই। আপনার নিকট গোনাহের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা কেবল মাত্র আপনার উপরেই ভরসা করি।
সর্বপ্রকার কল্যান ও মংগলের সাথে আপনার প্রশংসা করি। আমরা আপনার শোকর আদায় করি,
আপনার দানকে অস্বীকার করি না।আপনার নিকট ওয়াদা করছি যা, আপনার অবাধ্য লোকদের সাথে আমরা কোন সম্পর্ক রাখব না-তাদেরকে পরিত্যাগ
করব। হে আল্লাহ, আমরা আপনারই দাসত্ব স্বীকার করি। কেবলমাত্র
আপনার জন্যই নামাজ পড়ি, কেবল আপনাকেই সিজদা করি এবং
আমাদের সকল প্রকার চেষ্টা-সাধনা ও কষ্ট স্বীকার কেবল আপনার সন্ততুষ্টির জন্যই।
আমরা কেবল আপনার ই রহমত লাভের আশা করি, আপনার আযাবকে আমারা
ভয় করি। নিশ্চই আপনার আযাবে কেবল কাফেরগনই নিক্ষিপ্ত হবে।
বিঃদ্র :
বাংলা উচ্চারণে কখনই আরবী সহিহ হয়না তাই সকলকে অনুরোধ করব যথা শীঘ্র সম্ভব আরবীতে
উচ্চারণ শিখে নিতে তবেই আপনার নামাজ সহিহ হবে।
ইমামের পেছনে নামাজ আদায়ের জন্য যে বিষয়গুলো না
জানলেই নয়
ইসলামে
জামায়াতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায়ের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। হাদিসে একাকি কিংবা ঘরে
নামাজ আদায়কারীদের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। রাসুল (স.) বলেন, ‘আমার অন্তর চায় কিছু সংখ্যক যুবককে অনেকগুলো জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে
নিয়ে আসতে আদেশ দিই, তারপর ওইসকল লোকের নিকট যাই যারা ওজর
ছাড়া ঘরে নামাজ পড়ে নেয় এবং গিয়ে তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিই’। [মুসলিম
শরিফ] রাসুল (স.) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জামায়াতে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে নির্দেশ
দিয়েছেন। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে পাঠকদের জন্য আজ থাকছে ইমামের পেছনে জামায়াতে
নামাজ আদায়ের নিয়ম। উল্লেখ্য, যিনি ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করেন তাকে ‘মুক্তাদি’
বলা হয়।
নিয়মগুলো
হলো- ১. মুক্তাদি প্রথমে ইমামের পেছনে এক্তেদা করার
নিয়ত করবে। এক্তেদার নিয়ত ব্যতীত মুক্তাদির নামাজ সহীহ হবে না। ২. ইমামের তাকবীরে তাহরীমা-‘আল্লাহু আকবার’ শেষ হওয়ার পূর্বে
মুক্তাদির তাকবীর বলা শেষ করা যাবে না। ৩. ইমাম
সুরা/কিরাত শুরু করলে মুক্তাদি ছানা পড়া থেকে বিরত থাকবে। ৪. মুক্তাদি ইমামের পেছনে সুরা
ফাতিহা বা কিরাত কোনোটা পাঠ করবে না। সুরা ফাতিহার পূর্বে বিসমিল্লাহও
পড়বে না। ৫. মুক্তাদি রুকু থেকে উঠার
সময় ‘সামিআল্লাহুলিমান হামিদা’ না বলে ‘রব্বানা লাকাল হামদ’ বলে উঠবে। ৬. সালাম ফিরানোর সময় ইমামের ‘আসসালামু’ বলার আগে মুক্তাদির
‘আসসালামু’ বলা যেন শেষ না হয়। ৭. ইমামের সালাম ফিরানোর পর সাথে সাথে
মুক্তাদির সালাম ফিরানো উত্তম। ৮. ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় ডান দিকের মুসল্লী
এবং ফেরেশতাদের সালাম করার নিয়ত করবে, আর বাম
দিকে সালাম ফিরানোর সময় বাম দিকের মুসল্লী এবং ফেরেশতাদের সালাম করার নিয়ত করবে।
ইমাম বাম দিকে থাকলে বাম সালামে তাঁরও নিয়ত করবে। আর ইমাম সোজা বরাবর থাকলে উভয়
সালামেই তাঁর নিয়ত করবে। [সূত্র : আহকামে যিন্দেগী] ফয়জুল
আল আমীন প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক
ও গবেষক
ধর্ম ও ইসলামী জীবনঃ
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত, তাসবীহ, দোয়া ও মোনাজাত
ইসলাম ধর্মের ৫ টি স্তম্ভের( ১. ঈমান ২. নামাজ ৩. রোজা ৪. হজ্জ্ব
ও ৫. যাকাত ) মধ্যে নামাজ অন্যতম স্তম্ভ এবং নামাজ ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাদত।
প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত (নির্দিষ্ট নামাযের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ পড়া প্রত্যেক
মুসলমানের জন্য আবশ্যক বা ফরয। নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। শাহাদাহ্ বা
বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাই সকলের জন্য সঠিক
ভাবে নামাজ আদায় করা আবশ্যক। জেনে নিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত ও বাংলায়
মোনাজাত।
(১) ফজরের নামাজঃ
ক) ফজরের
২ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত :
বাংলায় : / নাওয়াইতু আন্
উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, সুন্নাতু
রাসুলিল্লা-হি তাআলা মুতাও য়াজজিহান্ ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু
আক্বার। /
খ) ফজরের ২ রাকাত
ফরজ নামাজের নিয়ত (বাংলায়)
:
*১. নিজে
নিজে নামায পড়িতে হলে :
/ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, ফারজুল্লা-হি তায়ালা
মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। /
**২. ইমামের পিছনে নামায পড়িতে হলে : / নাওয়াইতু
আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই
সালাতিল ফাজরি, ফারজুল্লা-হি
তায়ালা এক্তাদাইতু বিহা-যাল
ইমামি মুতা ওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
***৩. ইমামতি করিতে নিয়ত: / নাওয়াইতু
আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই
সালাতিল ফাজরি, ফারজুল্লা-হি তায়ালা আনা ইমামুল্লিমান হাজারা ও
মাইয়্যাফজুরু মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু
আকবার।/
(২) জোহরের নামাজঃ
জোহরের নামায মোট ১২ রাকাত। সূর্য মাথার উপর হইতে পশ্চিম্ দিকে একটু
হেলিয়া পড়িলেই জোহরের নামাযের ওয়াক্ত আরম্ভ হয় এবং কোন কিছুর ছায়া দ্বিগুণ
হইলে জোহরের ওয়াক্ত শেষ হইয়া যায়।
ক) জোহরের ৪ রাকায়াত সুন্নত নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-তাআলা আরবাআ
রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা
জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। )
খ) জোহরের ৪ রাকায়াত ফরজ নামাজের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ
রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি ফারজুল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
গ) জোহরের ২ রাকায়াত সুন্নত নামাজের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা
রাকায়াতাই সালাতিজ জোহরি সুন্নাতি রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজজিহান ইলা
জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
ঘ) জোহরের ২ রাকায়াত নফল নামাজের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আলা
রাকয়াতাই সালাতিল নাফলি মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু
আকবার।/
(৩) আছরের নামাজঃ
আছরের নামায মোট ৮ রাকাত। কোন লাকড়ির ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার
পর হইতে সূর্যাস্তের ১৫/২০ মিনিট পূর্বে পর্যন্ত আছরের নামাযের সময় থাকে।
ক) আছরের চার রাকায়াত সুন্নাত নামাযের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ
রাকায়াতি সালাতিল আছরি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল
কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
খ) আছরের চার রাকায়াত ফরজ নামাযের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ
রাকায়াতি সালাতিল আছরি ফারজুল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
৪) মাগরিবের নামাজঃ
মাগরিবের নামায মোট ০৭ রাকায়াত। সূর্যাস্তের পর হইতে
মাগরিবের নামাযের সময় হয় মাগরিবের ওয়াক্ত অতি অল্পকাল স্থায়ী।
ক) মাগরিবের ৩ রাকায়াত ফরজ নামাযের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা ছালাছা
রাকয়াতি সালাতিল মাগরিব ফারজুল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
খ) মাগরিবের ২ রাকায়াত সুন্নাত ফরজ নামাযের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা
রাকয়াতাই সালাতিল মাগরিবি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’য়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা
জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
গ) উক্ত দুই রাকায়াত সুন্নত নামায শেষ হইলে দুই রাকয়াত নফল
নামাজ পড়বেন।
৫) এশার নামাজঃ
এশার নামাজ মোট ১৫ রাকায়াত রাত ১২ টার পূর্বে এশার নামাজের
সময় শেষ হয়।
ক) এশার ৪ রাকায়াত সুন্নত নামাজের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ
রাকয়াতি এশায়ি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’য়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
খ) এশার চার রাকায়াত ফরজ নামাজের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ
রাকয়াতি এশায়ি ফারজুল্লা-হি তা’য়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
গ) এশার দুই রাকায়াত সুন্নাত নামাজের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তা’আলা
রাকায়াতি সালাতিল এশায়ি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজজিহান ইলা
জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
ঘ) তিন রাকায়াত বেতের নামাজের নিয়ত
বাংলায় : /নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা ছালাছা
রাকায়াতি সালাতিল বিতরি ওয়াজিবুল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি আল্লাহু আকবার।/
ঙ) উক্ত ৩ রাকায়াত বেতেরের নামাজ শেষ হইলে ২
রাকায়াত নফল নামাজ পড়বেন।
১। ফজরের নামাজের তাসবিহঃ-
বাংলায় : (হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।)-তিনি চির জীবিত ও
চিরস্থায়ী।
২। জোহরের নামাজের তাসবিহঃ-
বাংলায় : (হুয়াল আলিইয়্যাল আজীম)-তিনি শ্রেষ্ট্রতর অতি
মহান।
৩। আছরের নামাজের তাসবিহঃ-
বাংলায় : (হুয়ার রাহমা- নুর রাহীম)-তিনি কৃপাময় ও করুনা
নিধান।
৪। মাগরিবের নামায পড়ে তাসবিহঃ-
বাংলায় : (হুয়াল গাফুরুর রাহীম)- তিনি মার্জনাকারী ও
করুণাময়।
৫। এশার নামায পড়ে তাসবিহঃ-
বাংলায় : (হুয়াল্ লাতিফুল খাবীর)- তিনি পাক ও অতিশয়
সতর্কশীল।
সালাম বাংলায় : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
মোনাজাত বাংলায় :
/রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাওঁ ওয়াফিল আখিরাতি হাছানাতাওঁ
ওয়াকিনা আজাবান্নার। ওয়া সাল্লাল্লাহু- তাআলা আলা খাইরি খালক্বিহী মুহাম্মাদিওঁ
ওয়া আ-লিহি ওয়াআছহাবিহী আজমায়ীন। বিরাহমাতিকা ইয়া আরিহামার রাহিমীন।/
কেবলা ঠিক করিতে না
পারিলে করণীয় :
বি:দ্র: কেহ যদি ভুলিয়া কেবলা ঠিক করিতে না পারেন তবে
নিজের বিবেক যেই দিকে স্বাক্ষ্য দেয়, সেই দিকে মুখ করিয়া নামায
পড়িবেন।
সংগৃহীত ও সংশোধিত
নামাজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। প্রত্যেক মুসলমানকে নামাজের নয়ম সম্পর্কে জানা অনেক জরুরী। মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এর প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। আমিন।
ReplyDeleteপাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা নিয়ে একটি লেখা আশা করছি আপনার কাছে। মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাকে নেক হায়াত দান করুন।
ReplyDelete