Thursday, June 13, 2013

“আমার শরীরে বইছে মুসলমানের রক্ত, তাই আমি শহরে যা ঘটছে তা সহ্য করতে পারি না। Strange! I Never Think Him so ! :-( But Obama ??

১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ, শুক্রবার একের পর এক সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ভারতের বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাই। মুম্বাইয়ের ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ হিসেবে পরিচিত রক্তাক্ত ওই দিনটি  পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের সামনে নিয়ে আসে অনেকগুলো স্পর্শকাতর প্রশ্ন। ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান, জঙ্গিবাদের বিস্তার ছাড়াও যে বিষয়টি সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল, তা হল বলিউডের আলো ঝলমলে দুনিয়ার সঙ্গে অপরাধজগতের সম্পৃক্ততার অন্ধকার দিকের উন্মোচন। আর এসব কিছুই সাধারণ মানুষের নজরে এসেছে মাত্র একজন মানুষকে কেন্দ্র করে; তিনি হলেন ‘খলনায়ক’ সঞ্জয় দত্ত।

রুপালি পর্দায় এক সময়ের বড় দুই অভিনয়শিল্পী সুনীল দত্ত এবং নার্গিসের সন্তান সঞ্জয় দত্ত। ভালোবেসে ভক্তরা তাকে ডাকেন সঞ্জুবাবা। বাবা সুনীল দত্ত শুধু একজন বড় মাপের অভিনেতাই ছিলেন না, বরং একজন মানবিক গুণসম্পন্ন সমাজসেবক এবং সৎ রাজনীতিবিদও ছিলেন। সঞ্জয়ের মা নার্গিস বলিউডের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীদের একজন। ‘মাদার ইন্ডিয়া’-তে তার অভিনয় প্রতিভার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটে। ওই চলচিত্রের সেটেই সুনীল দত্তের সঙ্গে তার প্রণয়ের শুরু; ঐতিহাসিক ওই প্রণয় গড়ায় পরিণয় পর্যন্ত।
সুনীল-নার্গিস দম্পতির আদরের ছোট ছেলে সঞ্জয়; বিশেষ করে মায়ের আদরই ছিল সঞ্জয়ের পরম আশ্রয়। বাবা-মা দুজনই রূপালি পর্দার তারকা হওয়ায়, বলিউডি আবহেই বেড়ে উঠছিলেন তিনি। আর তাই যৌবনের প্রথম দিকেই অভিনেত্রী টিনা মুনিমের প্রেমে পড়েন; কিন্তু সেই প্রেমে
ব্যর্থ হলে, আবেগপ্রবণ সঞ্জু বেশ বড়সড় এক ধাক্কা খান জীবনে প্রথমবারের মতো। ওদিকে বলিউডে ছেলের অভিনয় ক্যারিয়ার শুরুর সময়েই ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন নার্গিস। একদিকে ব্যর্থ প্রেমের যন্ত্রণা অন্যদিকে মায়ের মৃত্যুশোক-- সবমিলিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েন সঞ্জয়। সব যন্ত্রণা ভুলে থাকতে মা-বাবার এই আদরের ছেলে ডুবে যান নেশার অতল অন্ধকারে।
ওই সময়ে বাবা সুনীল দত্তের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয় সঞ্জয়ের; আর এর সবকিছুই পারিবারিক জীবন থেকে দূরে ঠেলে সঞ্জয়কে নিয়ে যায় অপরাধজগতের দোরগোড়ায়। ওই সময় থেকেই মুম্বাই মাফিয়া জগতের সবচেয়ে বড় ত্রাস দাউদ ইব্রাহিমের নজরে পড়েন তিনি।

১৯৯১ সালে ‘ইয়ালগার’ ছবিটির শুটিংয়ের কাজে দুবাই গিয়েছিলেন সঞ্জয়। ছবিটির সেট পরিদর্শনে আসেন দাউদের ভাই আনিস। দাউদের নির্দেশনা অনুযায়ী  হট্টগোল আর সুরাপ্রিয় এই ৩১ বছরের যুবকটির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। আর এভাবেই ধীরে ধীরে দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে গড়ে ওঠে সঞ্জয়ের সম্পর্ক। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৯২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সঞ্জয়কে অপরাধ জগতের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে।তখনকার দিনে বলিউড রাষ্ট্রস্বীকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল না। এখানে ছিল না আজকের দিনের মতো কর্পোরেটদের আধিপত্য। অগাধ অবৈধ অর্থের মালিক আন্ডার-ওয়ার্ল্ডের গদফাদাররা অধিকাংশ চলচ্চিত্রে অর্থায়ন করত। এইসব ডন দুবাই বা মালয়েশিয়া থেকেই নিয়ন্ত্রণ করত বলিউড। এটাই ছিল তাদের কালো টাকা সাদা করার একটি সহজ উপায়। আর তাই বলিউডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের অনেকেই জড়িয়ে পড়েছিলেন মাফিয়াজগতের সঙ্গে। 
সঞ্জয়ের ‘ব্যাড বয়’ ইমেজের জন্য দাউদ সঞ্জয়কে ফিরোজ খান বা কবির বেদির মতো মাফিয়া ঘেঁষা সেলিব্রেটির চাইতে বেশি মূল্যায়ন করতেন। সে সময় বলিউডে সঞ্জয়কে ঘিরে গুঞ্জন ছিল যে তিনি বলিউডে আন্ডার-ওয়ার্ল্ডের অঘোষিত প্রতিনিধি।
পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের ওই রক্তাক্ত সিরিজ বোমা হামলার পেছনে ভারতীয় অপরাধজগতের মদদ ছিল বলে জানতে পারে সিবিআই। মুম্বাই মাফিয়াজগতের নিয়ন্তা দাউদ ইব্রাহিম ছিল সবকিছুর পিছনে। সঞ্জয় দত্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে তিনি ওই সময় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন দাউদ ইব্রাহিমের ভাই আনিস ইব্রাহিমের কাছে থেকে। এই অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয় যে সঞ্জয় আনিস ইব্রাহিমের সাহায্যে ৩টি স্বয়ংক্রিয় একে-৪৭ রাইফেল, ৯টি ম্যাগজিন, ৪৫০ রাউ- বুলেট এবং ২০টি হ্যান্ড গ্রেনেড সংগ্রহ করেছিলেন। তবে তার বিপক্ষে আনা অন্য অভিযোগ, যেমন এইসব অস্ত্র দাঙ্গায় ব্যবহার করা হয়েছে-- এমন কোনো প্রমাণ  সিবিআই  দিতে পারেনি। উল্লেখ্য, সঞ্জয় সিরিজ বোমা হামলার পরের দিন একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ধ্বংস করে ফেলেন।
এদিকে, যখন সুনীল দত্ত জানতে পারেন যে তার ছেলেকে পুলিশ মাফিয়া চক্রের কাছে থেকে অস্ত্র কেনার দায়ে হন্যে হয়ে খুঁজছে, তখন তিনি পুলিশ কমিশনার এএস সামরাকে জানান, সঞ্জয় সেই রাত্রেই মরিশাস থেকে ফিরছেন। তার দেওয়া তথ্য অনুসরণ করেই পুলিশ এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করে সঞ্জয়কে । পুলিশের জেরার মুখে সঞ্জয় অকপটে স্বীকার করেন সবকিছুই।
সঞ্জয়কে জেরাকারী অফিসার জয়েন্ট কমিশনারের কাছ থেকে জানা যায়, সেই রাতে সঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তার বাবা সুনীল এবং বোন প্রিয়া। এমন গুরুতর অপরাধের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সঞ্জয় বলেছিলেন, “আমার শরীরে বইছে মুসলমানের রক্ত, তাই আমি শহরে যা ঘটছে তা সহ্য করতে পারি না।
ভগ্নহৃদয় সুনীল সেদিন নতমস্তকে বেরিয়ে এসেছিলেন থানা থেকে।
কিন্তু, ওইসময় সঞ্জয়ের এসব আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের পেছনের কারণটা কী ছিল? সঞ্জয়ের এসব অস্ত্র কেনার সঙ্গে আসলেই কি কোনো সংযোগ ছিল মুম্বাই হামলার? নাকি, নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই এমনটা করেছিলেন সঞ্জয়? এ বিষয়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানে পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে মুম্বাইয়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে সুনীল দত্ত সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। সঞ্জয় মাঠ থেকে কাজ করে বাবাকে সাহায্য করতে থাকেন। এতে উগ্রপন্থি হিন্দুরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সুনীল দত্তকে বেশ কয়েকবার আক্রমণ করার চেষ্টাও করে তারা। এ রকমই এক আক্রমণের সময় সুনীল দত্ত নিজের গাড়িতে ছিলেন, সেদিন অল্পের জন্য তিনি মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান।
তেহেলেকা ম্যাগাজিনের করা তদন্তে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি এসেছে তা হল সুনীল দত্তের ক্রমান্বয়ে ভাঙতে থাকা স্বাস্থ্য ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। তার মুসলিমপ্রিয় স্বভাবের কারণে ততদিনে তিনি সমকালীন রাজনৈতিক নেতাদের নিকট গুরুত্ব হারাচ্ছিলেন। ওদিকে, উগ্র হিন্দুবাদীদের টার্গেটে পরিণত হওয়া দত্ত পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টিও পড়ে যাচ্ছিল হুমকির মুখে। এই অবস্থায় সঞ্জয় মনে করেছিলেন, হয়তো তার বাবা শেষপর্যন্ত পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন না। আর এ কারণেই নাকি, অবৈধ পথে আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহে অগ্রসর হন সঞ্জয়।

সম্প্রতি একটি ভারতীয় পত্রিকার সম্পাদকীয়তে প্রবীণ আইনজীবী শান্তিভূষণ বলেন, “১৯৯১ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় মুম্বাইয়ের একজন নির্বাচিত বিধানসভা সদস্য হিসেবে সঞ্জয়ের বাবা সুনীল দত্ত মুসলিমদের দাঙ্গাপীড়িত এলাকায় সাহায্য করেছিলেন, যা তাকে উগ্র হিন্দু মৌলবাদীদের চক্ষুশূলে পরিণত করে। তার পরিবারের উপর হামলা হবে, এমন হুমকি দিয়ে প্রতিদিন অজস্র ফোন আসত ওই সময়। শুধুমাত্র স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এমন হুমকি মোকাবেলা করতে সক্ষম ছিল। তাই সঞ্জয় নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করেই ওভাবে আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন।”অনুসন্ধান থেকে বেরিয়ে আসা এসব তথ্য-প্রমাণ পরবর্তীতে সঞ্জয়কে ভারতের অস্ত্র আইনে বড় ধরনের শাস্তি দেওয়ার বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে অনেকটাই। বোমা হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না থাকার পরও কেবল মাত্র অবৈধভাবে অস্ত্র সংগ্রহের দায়েই আদালতের তাকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেওয়ার ব্যাপারটিকে মানতে পারেননি অনেকেই।
সন্ত্রাসবাদ দমনে ১৯৮৫ সালে ভারতে প্রচলিত হওয়া টাডা (টেররিস্ট অ্যান্ড ডিজরাপ্টিভ অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট)  আইনে মামলা হয় সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও ১৯৯৪ সালে কারাদ-ে দ-িত হন সঞ্জয়।
সঞ্জয়কে যখন কারাগারে পাঠানো হয়, তখন মুক্তি পেয়েছিল মাধুরীর বিপরীতে তার অভিনীত সিনেমা ‘খলনায়ক’। সিনেমাটি সুপারহিট হওয়া সত্ত্বেও কারাদ-ের কারণে সঞ্জয়ের হাতছাড়া হয়ে যায় ‘ত্রিমূর্তি’ এবং ‘মোহরা’-র মতো সিনেমা। সিনেমাগুলোতে অভিনয় করে পরবর্তীতে সাফল্য লাভ করেছিলেন অনীল কাপুর এবং অক্ষয় কুমার।
১৯৯৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলে কাটানোর পর তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হয়। ততদিনে সঞ্জয় ১৪ মাস জেলে কাটিয়েছেন। সঞ্জয়ের বাবা সুনীল দত্তের বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সদস্য অভিনেতা শত্রুঘœ সিনহা পার্লামেন্টে আবেদন জানান, সঞ্জয়কে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার। তিনি বিশ্বাস করতেন, সঞ্জয় দোষী নন।
পরবর্তী দুই দশকে এই মামলায় তিন দফা কারাবরণ করতে হয়েছে সঞ্জয়কে। এছাড়াও, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ এবং মামলার শুনানি চলার করণে আদলতে নিয়মিতই হাজিরা দিতে হয়েছে তাকে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে দেওয়া টাডা কোর্টের রায়ে সঞ্জয়কে অবৈধভাবে অস্ত্র রাখার দায়ে ৬ বছর কারাদ- দেওয়া হয়। ২০১৩-এর ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ে জাস্টিস বি এস চৌহানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ টাডা কোর্টের দেওয়া ওই ৬ বছরের সাজাকে ১ বছর কমিয়ে ৫ বছর করেন। এই রায়ের বিপরীতে সঞ্জয়ের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন, কিন্তু অ্যাপেক্স সুপ্রিম কোর্ট টাডা আদালতের রায় বহাল রাখেন। অ্যাপেক্স কোর্টের দেওয়া রায়ে ‘অবৈধভাবে অস্ত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণের দায়ে’ সঞ্জয় দত্তকে ৫ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে, যার মাঝে ১৮ মাস তিনি অতীতে জেলে কাটিয়েছেন। সুতরাং তাকে অন্তত আর ৩ বছর কারাদ- ভোগ করতে হবে।
আদালত সঞ্জয় দত্তের আইনজীবীদের করা ৬ মাসের জামিন আবেদনের বিপরীতে ৪ সপ্তাহের জামিন দেন; ওই সময়ে হাতে থাকা সিনেমাগুলোর কাজ শেষ করে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। বর্তমানে পুনের ইয়েরওয়ারদা জেলে আছেন সঞ্জয়।
দলমত নির্বিশেষে বলিউডের সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে সঞ্জয় আসলে পরিস্থিতির শিকার এবং বিগত ২০ বছরে তিনি অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। বিখ্যাত পরিচালক মহেশ ভাট বলেন, “আমি একজন মানুষকে দেখতে পাচ্ছি যে তার দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। সঞ্জয় নিজের দুঃস্বপ্নের কারাগারে আটকা পড়েছে, সে যতই চেষ্টা করুক না কেন সেখান থেকে সে মুক্তি পাবে না। সুখ শুধু তাকে আরও দুঃখ দেওয়ার জন্যই আসে। আসলে সঞ্জুর জীবনে সুখ আর দুঃখ একের পর এক আসে না, তারা একই সময় একই মাত্রায় সবসময় ওর জীবনে বিরাজমান।”
সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর  সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা সঞ্জুবাবার ভাষ্য শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সঞ্জয় আসলেন শোকার্ত এবং ভেজা চোখে। সঞ্জয় বলেন, “আমি বিগত বিশ বছর ধরে প্রতিনিয়ত শাস্তি পাচ্ছি, ১৮ মাস জেল খেটেছি। তারা যদি চায় আমাকে আরো কষ্ট দিতে, তবে আমাকে আরও কঠিন হতে হবে। আজ আমার হৃদয় ভেঙে গেছে কারণ আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী এবং তিন সন্তানও এই শাস্তির ভুক্তভোগী। আমাকে তাদের কথা চিন্তা করে শক্ত থাকতে হবে, যদিও আমার মন ভেঙে গেছে।”
সঞ্জয় আরও জানান, তার হাতে থাকা সকল ছবি তিনি সময় থাকতেই দিন রাত পরিশ্রম করে শেষ করবেন এবং তার কোনো প্রযোজক এবং পরিচালককে নিরাশ করবেন না।
রায় ঘোষণার পর বলিউডের সকল নামিদামি তারকা, পরিচালক, প্রযোজক আসেন সঞ্জুবাবাকে সান্ত¡না দিতে। অভিনেতা অজয় দেবগন ও সালমান খান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সঞ্জয় জেলে থাকাকালীন তারা ভাবী আর বাচ্চাদের দেখাশোনা করবেন।
বর্তমানে তার হাতে থাকা ৬টি সিনেমায় প্রায় ২৭৮ কোটি টাকার লগ্নী করা আছে। সময়মতো সিনেমাগুলো শেষ করার জন্য সঞ্জয়ের সহকর্মী শিল্পীরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সঞ্জুবাবার জন্য সবাই এমনকি ক্লাব ডে আর পার্টি নাইটগুলোতেও শিডিউল বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। ‘পুলিশগিরি’ ছবির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানান বলিউডের বিভিন্ন সূত্র।
নিজের চার দশকের অভিনয়জীবনে সঞ্জয়ের অর্জন অনেক। অনেক হিট সিনেমার প্রধান অভিনেতা ছিলেন তিনি; অ্যাকশন, রোমান্টিক, কমেডি-- সব ঘরানার সিনেমাতেই সমান পারদর্শীতার সঙ্গে সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি। সাফল্যের খতিয়ানে যেমন রয়েছে ‘খলনায়ক’, ‘বাস্তব’, ‘শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’, ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’, ‘পরিণীতা’, ‘লাগে রাহো মুন্নাভাই’, ‘অগ্নিপথ’র মতো সিনেমা, তেমনি রয়েছে ফিল্মফেয়ারসহ ভারতের নামিদামি সব অ্যাওয়ার্ডের সেরা অভিনেতার পুরস্কার। ইতিবাচক এবং নেতিবাচক-- দুধরনের চরিত্রেই দর্শকদের কাছে সমান গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন সঞ্জয়। দর্শকদের কাছে অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত তাই জনপ্রিয় এক বলিউডি তারকার নাম। শুধু তাই নয় মানবিক দিক থেকেও বিভিন্ন দাতব্য কাজে তার সম্পৃক্ততা সাধারণ মানুষের কাছে তাকে পরিচিত করেছে ‘বিশাল হৃদয়’-এর এক মানুষ হিসেবে।
রূপালি পর্দায় ‘নায়ক’ আর ‘খলনায়ক’-- দুই ভূমিকাতেই সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করা সঞ্জয়কে গত চার দশকে নিজের বাস্তব জীবনেও পার হতে হচ্ছে নানান চড়াই-উৎরাই। আর তাই পর্দার সামনে কিংবা পর্দার পেছনের জীবনে সঞ্জয় ‘নায়ক’, না ‘খলনায়ক’, নাকি কেবলই দোষ-গুণের মিশেলে তৈরি এক চিরাচরিত মানুষ-- সময়ই ঠিক করবে তা।

No comments:

Post a Comment