Tuesday, July 15, 2014

স্বাস্থ্য কথা ১: নেট থেকে সংগৃহীত

                                                                জন্ডিস (Jaundice) 
                                            সংগৃহিত :   কৃতার্থ

জন্ডিস (Jaundice) কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। এতে চামড়া চোখ হলুদ দেখায় কারণ শরীরে বিলিরুবিন নামে হলুদ রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। বিলিরুবিনের স্বভাবিক পরিমাণ < .0-. মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার। এর দ্বিগুণ হলে বাইরে থেকে বোঝা যায়। কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয়ে যায়। চামড়া পাণ্ডুর বা ফ্যাকাশে দেখায় বলে একে আগে পাণ্ডুরোগ বলা হত। ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ডিসের একটি প্রধান কারণ হল ভাইরাস ঘটিত হেপাটাইটিস। >জন্ডিস কি? -জন্ডিস বলতে বুঝায় ত্বক-চোখ-মিউকাস মেমব্রেনে হলুদাভ
রঙ দেখা যাওয়াকে

>জন্ডিস কি কোন রোগ? -মনে রাখবেন, জন্ডিস কোন রোগ নয়, বরং এটি হলো রোগের লক্ষন
>এটি কোন কোন রোগের লক্ষন? -যেসব রোগে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেসব রোগে জন্ডিস দেখা দেয়। যেমন লিভারে হেপাটাইটিস ভাইরাসের আক্রমন; মদ, অতিরিক্ত প্যারাসিটামল বা বিষাক্ত মাশরুম সেবনে লিভার ড্যামেজ, কিছু রোগে লিভারে অতিরিক্ত আয়ন জমে লিভার ড্যামেজ, শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোষগুলোর অতি সক্রিয় হয়ে গিয়ে লিভার কে আক্রমন অথবা জন্মগত ত্রুটির কারণে লিভারের সঙ্গে অন্ত্রের সংযোগ স্থলে কোনপ্রকার বাধা। এছাড়াও যদি কোন কারণে শরীরের লোহিত রক্তকনিকা অতিরিক্ত ভাংগতে থাকে তাহলেও জন্ডিস দেখা দেয়। এগুলো ছাড়াও ক্যান্সার, গলব্লাডারে সমস্যা ইত্যাদিতেও জন্ডিস দেখা যায়
>বিলুরুবিন কি? -আমাদের শরীরের লোহিত রক্ত কনিকা (Red Blood Cell) প্রতি তিন মাস পরপর ভেঙ্গে যায় এবং নতুন রক্তকনিকা তৈরী হয়। লোহিত রক্ত কনিকার ভিতর থাকে হিমোগ্লোবিন। হিমোগ্লোবিন ভেঙ্গেই বিলুরুবিন তৈরী হয় এবং লিভারের মাধ্যমে প্রকৃয়াজাত হয়ে অন্ত্রে পৌছায়। অন্ত্র থেকে এটি মলের সাহায্যে শরীরের বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। কিছুটা আবার অন্ত্র থেকে রক্তে যায় এবং কিডনীর সাহায্যে মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বের হয়ে যায়
>জন্ডিসের লক্ষন কি কি? 1. হালকা জ্বর 2. দুর্বলতা 3. হলুদাভ ত্বক চোখ 4. অরুচি 5. বমি বমি ভাব থাকা বমি হওয়া 6. মাংসপেশী বা জয়েন্ট ব্যথা 7. কালচে মুত্র 8. কাদার মত মল 9. চুলকানি
>জন্ডিসে কেন ত্বক-চোখ হলুদ হয়ে যায়? -জন্ডিস মূলত হয় লিভারে সমস্যা হলে। লিভারে সমস্যা হলে তা রক্তের লোহিত রক্ত কনিকার হিমোগ্লোবিন ভেঙ্গে তৈরী বিলুরুবিন কে মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দিতে পারেনা। রক্তে তাই অনেক বিলুরুবিন জমে যায়। বিলুরুবিন এর রঙ হলো হলুদ। এই বিলুরুবিন ত্বকে-চোখে জমে তা হলুদ করে ফেলে
>জন্ডিসে কেন কালচে মূত্র দেখা যায়? -জন্ডিসে, বিলিরুবিন লিভারে প্রকৃয়াজাত হয়ে তা মূত্রের মাধ্যমে বের হয়ে যায় না। লিভার সময় নাজুক অবস্থাতে থাকাতে রক্তে অপ্রকৃয়াজাত বিলিরুবিন বেশী থাকে এবং মূত্রের সাহায্যে বের হয়। এই অস্বাভাবিক ধরণের বিলিরুবিন এর উপস্থিতিতে মূত্রের রঙ ভিন্ন হয়
>জন্ডিস হলে মলের রঙ কেন পরিবর্তিত হয়ে যায়? -সাধারণভাবে শরীর থেকে বিলুরুবিন নির্গত হওয়ার পথ হলো মল। বিলুরুবিন এর হলুদ রঙের কারণেই মলের রঙ হলুদ। যেহেতু জন্ডিস হলে মলের মাধ্যমে কম বিলুরুবিন নির্গত হয়, তাই মলের রঙ বদলে যায়
>সাধারণ অর্থে কোন রোগের লক্ষন কে জন্ডিস বলা হয়? -যদিও বিভিন্ন রোগেই জন্ডিস দেখা দেয়, তবে সাধারণ অর্থে জন্ডিস বলতে বুঝায় লিভারে হেপাটাইটিস ভাইরাসের আক্রমনে শরীরে অতিরিক্ত বিলুরুবিন জমে চোখ-ত্বক-মিউকাস মেমব্রেনে হলুদাভ ভাব। (লেখাটির বাকী অংশ ভাইরাল হেপাটাইটিস এর আলোকেই লেখা)
>ভাইরাল হেপাটাইটিস রোগটির পর্যায় কি কি?
-এটি দুই প্রকার-
1.Acute: এই ক্ষেত্রে জন্ডিসের লক্ষন গুলো দেখা যায়। তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজে নিজেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরী করতে থাকে এবং এই এন্টিবডি ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে। যতদিন যুদ্ধ চলবে আপনি অসুস্থ থাকবেন। যখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জয়লাভ করবে, জন্ডিসের লক্ষন গুলো চলে যাবে বা রোগের নিরাময় ঘটবে। কিন্তু দেহে এন্টিবডি গুলো রয়ে যাবে, ফলে ভবিষ্যতে আর কখনো হেপাটাইটিস ভাইরাস আপনার শরীরে বাসা বাধবে না
2.Chronic: শুধুমাত্র হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের প্রভাবে রোগটি এই পর্যায়ে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে জন্ডিসের লক্ষন দেখা যায়না (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই). বছরের পর বছর রোগীর শরীরে ভাইরাস থেকে যায় এবং নীরবে লিভারের ক্ষতি করে যায়। -সুতরাং জন্ডিস বলতে সাধারণ অর্থে Acute Viral Hepatitis বুঝায়
>জন্ডিসের চিকিতসা কি?
-জন্ডিস বলতে সাধারণ অর্থে Acute Viral Hepatitis বুঝায় যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজ থেকেই প্রতিরোধ করবে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে এন্টিবডি তৈরী করবে যা ভবিষ্যতেও আপনাকে এই রোগ থেকে সুরক্ষা দিবে। সুতরাং জন্ডিসের জন্য কোন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই
>Acute Viral Hepatitis কি তাহলে ডাক্তার দেখানোরই কোনো প্রয়োজন নেই? -আপনি অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন। কারণ-
1. জন্ডিস নির্মূল (অর্থাত ভাইরাস নির্মূল) এর জন্য ওষুধের প্রয়োজন না থাকলেও ডাক্তার আপনাকে জন্ডিসের অন্যান্য উপসর্গ যেমন বমি ভাব, চুলকানি ইত্যাদি কমানোর ওষুধ দিয়ে আপনার আরাম নিশ্চিত করতে পারবে
2.কারো কারো ক্ষেত্রে (বৃদ্ধ বা শিশু) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল থাকতে পারে, যা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। ডাক্তার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে
3. যদিও জন্ডিস বলতে সাধারণ অর্থে ভাইরাল হেপাটাইটিস বোঝানো হয় এবং এই লেখার মূল ফোকাস সেখানেই, কিন্তু প্রথমেই তো বলে নিয়েছি যে অন্যান্য অনেক কারণে জন্ডিস হতে পারে। সেইসব কারণের জন্য কিন্তু ওষুধ খেতে হবে যা একমাত্র ডাক্তারই পারে নিশ্চিত করতে
>কেন জন্ডিসে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেতে মানা করা হয়? -অনেক ওষুধ আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর তার প্রকৃয়াজাতকরণের কাজটি করে লিভার। জন্ডিসে যেহেতু লিভার খুবই নাজুক অবস্থায় থাকে, এই সময় আবার কোনো ওষুধ প্রকৃয়াজাতকরণের কাজটা লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে দেয়। তাই সময় যত কম ওষুধ খাওয়া যায়, ততই ভালো। এমনকি জন্মনিয়ন্ত্রন পিল বা হার্বাল ওষুধও বর্জন করুন
<a href='http://ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=a30d1e30' target='_blank'><img src='http://ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=686&amp;n=a30d1e30' border='0' alt='' /></a>
>জন্ডিসে কেন পানীয় খেতে বলা হয় ? -যেহেতু জন্ডিসে বমি হয়, এর ফলে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। ডিহাইড্রেশন বা পানিশুণ্যতা এড়ানোর জন্য পানীয় খেতে বলা হয়। তাছাড়া, পর্যাপ্ত পানি খেলে মুত্রের সাহায্যে রক্তের অতিরিক্ত বিলিরুবিন বেশী নিষ্কাশিত হয়ে যায়
>অতিরিক্ত পানি খেয়ে ফেললে কি কোন সমস্যা আছে? -জন্ডিস হলে অতিরিক্ত নয়, পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করুন। দিনে তিন লিটার বা ১২ গ্লাস এর মত পানি খেতে চেষ্টা করুন
>জন্ডিসে কি সলিড খাবার বাদ দিয়ে শুধু পানীয় এর উপর নির্ভর করা উচিত? -অবশ্যই না। এসময় দুর্বলতা কাজ করে। তাছাড়া বমির ফলে অনেক খাবার পেট থেকে বের হয়ে যায়। ফলে আপনার এসময় আরো বেশী ক্যালরি গ্রহণ প্রয়োজন। সলিড খাবার না খেলে ক্যলরি কোথা থেকে আসবে?
>জন্ডিসে স্যালাইন দেয়ার প্রয়োজন আছে কি? -যদি পর্যাপ্ত পানি খাওয়া হয়, তবে প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি না খেয়ে পানিশুণ্যতা বা ডিহাইড্রেশন দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে স্যালাইনের প্রয়োজন আছে
>জন্ডিসে কেন মদ্যাপান করতে মানা করা হয়? -মদ প্রকৃয়াজাত হয় লিভারে। জন্ডিসে যেহেতু লিভার খুবই নাজুক অবস্থায় থাকে তাই সময় মদ্যাপান করতে একেবারেই নিষেধ করা হয়
>জন্ডিসে কেন কম তেল খেতে বলা হয়? -তেল কম খেতে বলা হয়, কারণ তেল হজম করার জন্য বাইল নামক একটি পদার্থের প্রয়োজন হয় যা লিভার হতে তৈরী হয়। জন্ডিসে যেহেতু লিভার নাজুক অবস্থায় থাকে তাই একে অতিরিক্ত চাপ না দেওয়ার জন্য তেল এড়িয়ে চলতে বলা হয়
>জন্ডিসে কেন কম মশলা খেতে বলা হয়? -জন্ডিসে এমনিতেই বমি বমি ভাব বেশী হয়। সময় এই জন্য কম মশলা খেতে বলা হয় যাতে বমি বমি ভাব কম লাগে। কিন্তু সাধারণ একটা বিশ্বাস আছে যে হলুদ খেলে জন্ডিসের হলুদ ভাব আরো বাড়বে, এই বিশ্বাসের কোন ভিত্তি নেই
>জন্ডিসে মাছ-মাংস খাওয়া যাবে কি? -অনেকে সময় মাছ-মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকে যা একেবারেই অনুচিত। এতে শরীরে প্রোটিন এর অভাব ঘটে যা আরো নানা ধরণের জটিলতা বয়ে আনতে পারে
>জন্ডিসে কোন ভিটামিন খাওয়ার প্রয়োজন আছে কি? -গবেষনায় ভিটামিন সেবনে জন্ডিস দ্রুত আরোগ্যের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই ভিটামিন নেওয়াটাও অত্যাবশ্যক না
>জন্ডিসে বিশ্রাম নেওয়া কেন জরুরী? -সমস্ত শরীরের মেটাবলিসমের অনেকটাই নির্ভর করে লিভারের উপর। এসময় বিশ্রাম নিলে মেটাবলিসমের হার কম থাকে এবং লিভারের উপর চাপ কম পরে
>বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কি ঘুমের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে? -না। লিভারের নাজুক অবস্থায় এই জাতীয় ওষুধ ব্রেনের উপর কাজ করে অনেক সময় আপনাকে এমনকি কোমাতেও নিয়ে যেতে পারে
>জন্ডিসে কারো অতিরিক্ত ঘুমানোই কি তাহলে ভালো লক্ষন? -জন্ডিসে বিশ্রাম নিলে জলদি সেরে উঠবেন এটা সত্যি, তাই বলে কারো অতিরিক্ত ঘুমানোটা ভালো লক্ষন না। কারো ঘুমের রুটিনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন মানে তার শরীর অনেক বেশী দুর্বল হয়ে পরেছে, তাকে দ্রুত ডাক্তার এর তত্ত্বাবধানে নিতে হবে
>জন্ডিসে কখন হাসাপাতালে ভর্তি করতে ? -নিম্নের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে- 1.যদি রোগীর আচার-আচরন, বুদ্ধিমত্তার পরিবর্তন হয় (অস্বাভাবিক আচরণ করে বা মাথা কাজ করেনা) 2. যদি রোগীর শরীরে কাপুনি থাকে। 3. যদি কারো জাগা ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন দেখা দেয়। 4.জন্ডিসে নিয়মিত billirubin level prothombin time test করা হয়। যদি billirubin level ৩০ mg/dL এর বেশী অথবা prothombin time তিন সেকেন্ডের বেশী আসে, তবে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। 5.যদি কারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগে থেকেই দূর্বল বলে জানেন অথবা রোগী যদি ৫০ বছরের বেশী বয়স্ক লোক বা শিশু (এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল) হয়, তবে হাসপাতালে ভর্তি করুন
>জন্ডিসের চিকিতসা হিসেবে কিছু পেশাদার লোকের দ্বারা – 1. চুনের পানি দিয়ে হাত ধোয়ানো হয় যাতে হাত থেকে হলুদ পানি বের হয়। 2.নাভীমুলে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করানো হয় যার ফলে নাভী হতে হলুদ একধরণের পদার্থ বের হয়। 3.এমন ওষুধ খাওয়ানো হয় যা খেলে বমি হয় এবং বমির সাথে হলুদ পদার্থের একটি চাক বের হয়ে আসে। এইসব চিকিতসার কি কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে? -আমি আগেই বলেছি, জন্ডিস মানে হলো শরীরে অতিরিক্ত বিলিরুবিন জমা। শরীর থেকে বিলিরুবিন বের হওয়ার রাস্তা হলো মল। ত্বক, নাভীমূল দিয়ে কখনো বিলিরুবিন বের হওয়া সম্ভব না। বিলিরুবিন পাকস্থলিতে কোন কঠিন পদার্থ হিসেবে জমাট বেধেও থাকেনা যা চাক হিসেবে বের হয়ে আসবে। এ্গুলো শুধুমাত্র অপচিকিতসা ছাড়া কিছুই না
>জন্ডিসের চিকিতসা হিসেবে কিছু পেশাদার লোকের কাছ হতে একধরণের মালা আনা হয় যা মাথায় পরানো হয় এবং মালাটি আস্তে আস্তে গলায় নেমে আসে অথবা একটি পাতা বালিশের নীচে রেখে দেয়া হয় এবং আস্তে আস্তে তা দুটি হয়ে যায়। এইসব চিকিতসার কি কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে? -এগুলোও মানুষকে ধোকা দেওয়ার উপায় মাত্র। জন্ডিস এমন একটি অবস্থা যা সময়ক্ষেপনে শরীরের রোগ অপ্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বারা আপনি থেকেই নির্মূল হয়। এই ধরণের পদ্ধতিতে আসলে এমন কোন জারি জুরি থাকে যা কালক্ষেপনে ভোজবাজি দেখায় (যেমন মাথার মালা গলায় নামা বা একটি পাতা দুটি হওয়া). মূলকথা হলো সময় পার। এই সময়ে জন্ডিস আপনা থেকেই সেরে যায়। ফলে ঝরে বক মরে আর ফকিরের কেরামতি বাড়ে
>জন্ডিসে কোন ভেষজ ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন আছে কি? -ভেষজ ওষুধে কি কি উপাদান আছে তা অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষিত না। জন্ডিসে লিভার এতটাই নাজুক থাকে যে এতে থাকা কোন উপাদান লিভারের ক্ষতি করে ফেলতে পারে। তাছাড়া আপনি নিজ থেকে সেরে উঠলে ওষুধ কেন খাবেন? তাছাড়া আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজ থেকেই জন্ডিস প্রতিরোধ করবে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে এন্টিবডি তৈরী করবে যা ভবিষ্যতেও আপনাকে এই রোগ থেকে সুরক্ষা দিবে। সুতরাং শরীরকে তার কাজ করতে দিন
>তাহলে জন্ডিস হলে কি করবেন? -জন্ডিসের জন্য প্রয়োজন Supportive Treatment. পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পানীয়, নিয়মিত টেস্ট করানো এবং মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকা, ব্যস।
              
                                                     গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা :
গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা আমাদের দেশে খুবই স্বাভাবিক ব্যপার। অনেককে বছরের প্রায় সময়ই ভূগতে হয় এ সমস্যায়

গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন? খাবার সময় একটু ওলট পালট হলেই শুরু হয় সমস্যা? অনেককেই বছরের প্রায় সময় এই সমস্যায় ভূগতে হয়। যে কোনো জায়গায় এই সমস্যার প্রতিকার হিসাবে পাওয়া যায় অনেক নামি-দামি ওষুধ। কিন্তু যখন আমাদের হাতের কাছে রয়েছে বিভিন্ন প্রকৃতিক জিনিস যা দিয়ে দ্রুত এবং তাৎক্ষণিক এই গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা সমাধান করা সম্ভব তবে কেন খাবেন আপনি ঔষধ? চলুন তবে দেখে নিই গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধানে ৯ টি খাবার।

পুদিনা পাতা
--------------
পুদিনা পাতার রস গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
দূর করতে সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিদিন পুদিনা পাতার রস বা পাতা চিবিয়ে খেলে এসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়া পুদিনা পাতা আপনাকে বদহজম থেকেও দূরে রাখবে।
লবঙ্গ
--------------
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান করবে লবঙ্গ। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা শুরু হলে দুটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চিবোতে থাকুন। এবং চুষে রসটা খেয়ে ফেলুন। দেখবেন এসিডিটি দূর হয়ে গেছে কিছুখনের মধ্যেই।
জিরা
--------------
এক চা চামচ জিরা একটি প্যানে নিয়ে শুকনো করে ভেজে ফেলুন। এরপর ভাজা জিরা এমন ভাবে গুঁড়ো করুন যেন একেবারে পাউডার না হয়ে যেয়ে একটু ভাঙা ভাঙা থাকে। এরপর একগ্লাস পানিতে জিরা গুঁড়ো মিশিয়ে প্রতিবার খাবারের সময় পান করুন। দেখবেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকবে না।
আদা
--------------
আদা বুক জ্বালাপোড়া এবং এসিডিটির সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকর। প্রতিবার খাবার খাওয়ার আধ ঘন্টা আগে ছোট এক টুকরো আদা কাঁচা চিবিয়ে খান দেখবেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা একেকবারেই থাকবে না।
গুড়
--------------
গুড় আপনার বুক জ্বালাপোড়া এবং এসিডিটি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে রেহাই দিতে পারে। যখন বুক জ্বালাপোড়া করবে সাথে সাথে একটুকরো গুড় মুখে নিয়ে রাখুন। যতক্ষণ না সম্পূর্ণ গলে যায় ততোক্ষণ মুখে রেখে দিন। তবে এই সমাধান অবশ্যই ডায়বেটিস রোগিদের জন্য নয়।
তুলসি পাতা
--------------
ঔষধি গুণে ভরা তুলসী পাতার কথা কে না জানেন। এসিডিটি দূর করতেও এটি বেশ কার্যকর। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা শুরু হলে ৫/৬ টি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেয়ে দেখুন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে। এছাড়া প্রতিদিন তুলসি পাতা পানির সাথে ব্লেন্ড করে খেলে একেবারে দূর হবে গ্যাস্ট্রিক ও এসিডিটির সমস্যা।
দুধ
--------------
দুধের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা পাকস্থলীর বাড়তি এসিড কমাতে সাহায্য করে। রাতে একগ্লাস দুধ ফ্রিজে রেখে দিয়ে পরদিন সকালে খালি পেটে ঠান্ডা দুধটুকু পান করে নিন। দেখবেন সারাদিন এসিডিটির সমস্যা হবে না। তবে যাদের দুধে অ্যালার্জি রয়েছে তারা এর থেকে দূরে থাকবেন।
ভ্যানিলা আইসক্রিম
--------------
আইসক্রিম খেতে কে না ভালোবাসে বলুন। কিন্তু আইসক্রিমটাকে বেশি স্বাস্থ্যকর মানা হয় না। অথচ ভ্যানিলা আইসক্রিমের রয়েছে এসিডিটি দূর করার ক্ষমতা। এসিডিটি হলে একটু ভ্যানিলা আইসক্রিম খেয়ে নিন। তবে বেশি খাবেন না।
বোরহানী
--------------
বিয়ে বাড়িতে পোলাও রেজালার সাথে বোরহানি কেন রাখা হয় জানেন? কারণ এটি গ্যাস্ট্রিক ও এসিডিটি এবং বদহজম থেকে রক্ষা করে। বোরহানি টক দই, বীট লবণ ইত্যাদি এসিডিটি বিরোধী উপাদান দিয়ে তৈরী । প্রতিদিন খাবারের পর একগ্লাস বোরহানি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে।
                                           
                                           ধূমপায়ীদের বার্জার:
                      
২০-৪০ বছর বয়সি ধূমপায়ীদের বার্জার রোগ  বেশি  হয়। ইউরোপ আমেরিকায় বার্জার’স ডিজিজের রুগী তুলনামুলক কম থাকলেও এই ভারতীয় উপমহাদেশে এই সংখ্যা অনেক বেশি।
নিয়মিত ধূমপানকারীদের রক্তনালীতে প্রদাহ শুরু হয়, ফুলে যায় এরপর রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালীকে ব্লক করে দেয়
। এই প্রদাহ একসময় নার্ভেও ছড়িয়ে পরে, ফলে প্রচণ্ড ব্যাথাও হয়।
গাছ যেমন বেঁচে থাকার জন্য পানির দরকার হয়, মানুষের অঙ্গের বেঁচে থাকার জন্য দরকার হয় রক্ত সরবরাহ।
ধরুন, পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে যে রক্তনালী রক্ত সরবরাহ করতো, সেটি ব্লক হয়ে গেল। এর ফলে বুড়ো আঙ্গুলে রক্ত সরবরাহ হবেনা। ফলে বুড়ো আঙ্গুলে ঘা শুরু হবে এবং একসময় পচন ধরবে। তখন আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়। এরপরও যদি সে ধুমপান চালিয়ে যায় তখন আবার আগের সমস্যা শুরু হয় এবং একসময় পুরো পা পর্যন্ত কেটে ফেলে দিতে হয়।
বার্জার’স ডিজিজ হলে সাধারণত যা পাওয়া যায়,
- বিশ্রামে থাকলে কিংবা হাঁটলে আক্রান্ত পায়ে ব্যাথা করে।
- আক্রান্ত জায়গাটি ঠাণ্ডার প্রতি সংবেদনশীল হয়ে যায়
- আক্রান্ত স্থানের উপরের চামড়া পাতলা ও চকচকে হয়ে যায়। রঙ নীল থেকে লালচে নীলে পরিবর্তন হয়।
- পায়ে ঘা হয় ও শেষ পরিনতি হিসেবে পচন শুরু হয়।
রোগ শুরু হওয়ার আভাস পাওয়া গেলেই ধূমপান সম্পূর্ণ ও স্থায়ীভাবে বর্জন করতে হবে। ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নার্ভ কেটে ফেলা হয় (লাম্বার সিমপ্যাথেকটমি)। চিকিৎসা হিসেবে এখন রক্তনালীতে বাইপাশ অপারেশনও করা হয়।
তবে এসব কোন কিছুই রুগীর জন্য ভাল না। বার্জার’স ডিজিজের একমাত্র প্রতিরোধ ও চিকিৎসা হল- ধূমপান বর্জন করা, ধূমপান বর্জন করা, ধূমপান বর্জন করা।
 সংগৃহীত।
                                                     ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা:

অনেকেরই ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার বদ অভ্যাস আছে। আর এটি নিঃসন্দেহে একটি খুব বাজে অভ্যাস। বিষেশ করে তার আশেপাশে যে থাকে তাদের কাছে এটি অতি বিরক্তিকর একটি ব্যাপার। জরিপে দেখা গেছে পৃথিবীর প্রায় ৪০% পুরুষ প্রায় ২৫% নারী এই সমস্যায় ভুগে থাকে। বিশেষ করে ৫৫ থেকে ৮৬ বছর বয়সের মধ্যে এটি বেশী হয়ে থাকে। সাধারণত যখন সুস্থ শান্তিপূর্ন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তখন এটি হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এর তেমন স্থায়ী কোন সমাধান না থাকলেও কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আজ আমরা নাক ডাকা প্রতিরোধে কয়েকটি মূল্যবান টিপস নিয়ে আলোচনা করব।

* এক পাশ করে ঘুমানঃ

সাধারণ আপনি যখন সোজা হয়ে ঘুমান তখন আপনার পাকস্থলিতে অনেক চাপ
পড়ে। আর এর ফলে নাক ডাকার সমস্যা হয়। তাই যদি আপনার নাক ডাকার অভ্যাস থাকে তাহলে যেকোনো এক সাইড করে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। এতে আপনার নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হবে না।

* অতিরিক্ত ওজন কমানঃ

অনেক সময় শরীরে অতিরিক্ত ওজনের ফলেও এই সমস্যা হয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন সামান্য ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। বিশেষ করে ঘাড়ের কাছে গলায় অতিরিক্ত ফোলা থাকলে নাক ডাকার সমস্যা বেশী হয়। তাই প্রতিদিন হালকা ম্যাসাজের মাধ্যমেও ওজন কমানো সম্ভব।

* এলকোহল ঘুমের ওষুধ ত্যাগ করাঃ

প্রতিদিন এলকোহল ঘুমের ওষুধ গ্রহন আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ নার্ভ সিস্টেমের উপর চাপ সৃষ্টি করে যা পরবর্তিতে গলা চোয়ালের উপড় প্রেশার ফেলে নাক ডাকা শুরু করে। তাই নাক ডাকা থেকে পরিত্রান পেতে দ্রুত এলকোহল ঘুমের ওষুধ ত্যাগ করুন।

* আপনার এলার্জি জনিত রোগের চিকিৎসা করুনঃ

আপনার যদি কোনো কিছুতে এলার্জি থাকে বিশেষ করে নাকে তাহলে দ্রুত তার চিকিৎসা করুন। কারন নাকের এলার্জির কারনে নাক বন্ধ থাকলে ঘুমের সময় নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। ফলে নাক ডাকা রোগ হতে পারে। তাই ঘুমানোর পূর্বে নাকে প্রয়জনীয় স্প্রে অথবা নেসাল ক্লীপ ব্যাবহার করুন।

* ধুমপান ত্যাগ করুনঃ

ধূমপান শরীরের শ্বসনতন্ত্রের অনেক ক্ষতি করে। এর ফলে ফুসফুসের উপর চাপ পড়ে। ফলে নিশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং নাক ডাকা আরম্ভ হয়। তাই অতিরিক্ত ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

* প্রতিদিন ঘুমানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় তৈরী করুনঃ

অনেক সময় অনিয়মিত ঘুমের কারণেরও নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। তাই প্রতিদিন সময়মত পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

* মাথার বালিশটা একটু উচু করে নিনঃ

ঘুমানোর সময় শরীরের সাথে মাথা সমান উচ্চতায় থাকলে এই সমস্যাটি অনেক বেশী হতে পারে। তাই ঘুমানোর পূর্বে মাথায় একটা অতিরিক্ত বালিশ ব্যাবহার করুন
কৃতার্থ








No comments:

Post a Comment